অটিজম ও প্রতিবন্ধী এক নয়, জানুন অটিজম ও প্রতিবন্ধী মধ্যে পার্থক্য 

অটিজম আর প্রতিবন্ধী শব্দগুলো শুনলেই কেমন যেন একটা দ্বিধা কাজ করে, তাই না? মনে হয় যেন দুটো একই জিনিস, অথবা খুব বেশি পার্থক্য নেই। কিন্তু সত্যি বলতে, অটিজম ও প্রতিবন্ধী মধ্যে পার্থক্য রয়েছে অনেকটাই। আজকে আমরা এই বিষয় গুলো নিয়েই সহজ ভাষায় আলোচনা করবো, যাতে আপনি সহজেই বুঝতে পারেন। তবে এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য গুলো জানা কেন দরকার, সেটা একটু পরেই বলছি।

অটিজম কাকে বলে?  

মূলত অটিজম (Autism) হলো ব্রেইন ডেভেলপমেন্টের সমস্যা। এটা কোনো রোগ না, বরং বিকাশের একটা ভিন্নতা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অন্যদের থেকে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করে এবং তাদের অনুভূতি গুলোও একটু আলাদা হয়।

সাধারণত শিশুদের জন্মের প্রথম কয়েক বছরেই এটা ধরা পরে। অনেক সময় দেখা যায়, একটি শিশু অন্যদের মতো স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলা করছে না, অথবা কথা বলতে একটু দেরি করছে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে কিছু বিশেষ সমস্যা দেখা যায়, যেমন:

১) অন্যের সাথে মিশতে অসুবিধা হওয়া। তারা সহজে অন্যদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে না, অথবা অন্যদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা বুঝতে পারে না।

২) কথা বলতে সমস্যা হওয়া। কারো কারো কথা বলতে দেরি হয়, আবার কেউ কেউ কিছু বিশেষ শব্দ বা বাক্য বারবার বলতে থাকে।

৩) একই কাজ বারবার করা। যেমন, একটা খেলনা গাড়িকে সারাদিন ধরে শুধু ধাক্কাতে থাকা অথবা একই রকম অঙ্গভঙ্গি করতে থাকা।

একটা সহজ উদাহরণ দেই। ধরুন, আপনার বাচ্চা অনেকগুলো খেলনার মধ্যে শুধু একটা নির্দিষ্ট খেলনার প্রতি বেশি আকর্ষণ দেখাচ্ছে এবং সেটা নিয়েই খেলতে চাইছে। অন্য খেলনাগুলোর দিকে তার কোনো মনোযোগ নেই। এটা অটিজমের একটা লক্ষণ হতে পারে। তবে এটাই একমাত্র লক্ষণ নয়। নিম্মে বেশ কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জানানো হলো। 

অটিজমের লক্ষণগুলো কী কী?

প্রত্যেক বাচ্চার মধ্যে অটিজমের লক্ষণ আলাদা হতে পারে। কারো মধ্যে হয়তো অল্প কিছু লক্ষণ দেখা যায়, আবার কারো মধ্যে অনেক বেশি লক্ষণ দেখা যেতে পারে। তাই, একটা বাচ্চার সাথে অন্য বাচ্চার তুলনা করা উচিত না।

কয়েকটা সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:

১) চোখের দিকে না তাকানো। যখন আপনি তার সাথে কথা বলছেন, সে হয়তো আপনার চোখের দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

২) নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া। আপনি তার নাম ধরে ডাকছেন, কিন্তু সে কোনো মনোযোগ দিচ্ছে না।

৩) অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে না চাওয়া। সে একা থাকতে পছন্দ করে এবং অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে চায় না।

৪) কথা বলতে দেরি হওয়া অথবা কিছু বিশেষ শব্দ বারবার বলা। তার বয়স অনুযায়ী কথা বলার দক্ষতা কম অথবা সে একই শব্দ বা বাক্য বারবার বলছে।

পরিসংখ্যান বলছে, US-এ 2018 সালে প্রতি ৪৪ জনে ১ জন অটিজমে আক্রান্ত ছিল। তার মানে, অটিজম এখন আগের থেকে অনেক বেশি পরিচিত একটা সমস্যা।

প্রতিবন্ধী কাকে বলে?  

প্রতিবন্ধী (Disability) মানে হলো শারীরিক, মানসিক বা বুদ্ধিভিত্তিক অক্ষমতা। এই অক্ষমতাগুলোর কারণে একজন ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনযাপনে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে পারে।

এটা জন্মগত হতে পারে, আবার কোনো দুর্ঘটনার কারণেও হতে পারে। কারো হয়তো জন্ম থেকেই হাত বা পায়ের সমস্যা আছে, আবার কারো হয়তো কোনো দুর্ঘটনার কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেছে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী রয়েছে, যেমন:

১) শারীরিক প্রতিবন্ধী: যেমন হাত বা পায়ের সমস্যা। কারো হাত বা পা না থাকা অথবা হাত-পায়ে দুর্বলতা থাকা।

২) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী: চোখে দেখতে সমস্যা। কারো কম দেখা অথবা একদম দেখতে না পারা।

৩) শ্রবণ প্রতিবন্ধী: কানে শুনতে সমস্যা। কারো কম শোনা অথবা একদম শুনতে না পারা।

৪) বুদ্ধি প্রতিবন্ধী: শেখার বা বোঝার ক্ষমতা কম থাকা। তাদের নতুন কিছু শিখতে বা বুঝতে অনেক অসুবিধা হয়।

সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক কাজ করছে। তাদের জীবনকে সহজ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। যেমন:

সুবিধাকারা পায়?কীভাবে পাওয়া যায়?
ভাতাদরিদ্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসমাজসেবা অফিস থেকে আবেদন করতে হয়
শিক্ষা বৃত্তিপ্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে হয়
চাকরিশারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হয়

অটিজম ও প্রতিবন্ধী মধ্যে পার্থক্য সমূহ 

#১. বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা

অটিজম: এটা মূলত ব্রেইনের (brain) বিকাশের সমস্যা, যেখানে সামাজিক যোগাযোগে সমস্যা হয়। অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অন্যদের সাথে মিশতে, কথা বলতে এবং তাদের অনুভূতি বুঝতে অসুবিধা বোধ করে।

প্রতিবন্ধী: এটা শারীরিক, মানসিক বা বুদ্ধিভিত্তিক অক্ষমতা, যা জীবনের নানা ক্ষেত্রে বাধা দেয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের অক্ষমতার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়।

#২. সুযোগ-সুবিধার পার্থক্য

অটিজম: এদের জন্য বিশেষ শিক্ষা ও থেরাপির (therapy) প্রয়োজন। তাদের সামাজিক এবং যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ শিক্ষা এবং থেরাপির ব্যবস্থা করা হয়।

প্রতিবন্ধী: এদের জন্য ভাতা, চাকরি এবং শিক্ষার সুযোগের প্রয়োজন। তাদের আর্থিক সাহায্য, কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

#৩. সমাজে দৃষ্টিভঙ্গি

অটিজম: সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে মানুষ তাদের ভালোভাবে বোঝে। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রতিবন্ধী: সামাজিক অন্তর্ভুক্তি (social inclusion) দরকার, যাতে তারা সমাজের অংশ হতে পারে। তাদের সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার সুযোগ করে দিতে হবে।

নিচে একটা table দেওয়া হলো, যা পার্থক্য গুলো সহজে বুঝতে সাহায্য করবে:

বৈশিষ্ট্যঅটিজমপ্রতিবন্ধী
সংজ্ঞামানসিক বিকাশজনিত সমস্যাশারীরিক, মানসিক বা বুদ্ধিভিত্তিক অক্ষমতা
সমস্যাসামাজিক যোগাযোগে অসুবিধাজীবনের নানা ক্ষেত্রে বাধা
সমাধানবিশেষ শিক্ষা ও থেরাপিভাতা, চাকরি ও শিক্ষার সুযোগ
সমাজে দৃষ্টিভঙ্গিসচেতনতা বাড়ানোসামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা

চুড়ান্ত মন্তব্য 

অটিজম এবং প্রতিবন্ধী—দুটোই আলাদা বিষয়, কিন্তু দুটোতেই মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার। আসুন, আমরা সবাই মিলে তাদের পাশে দাঁড়াই এবং তাদের জীবনকে সুন্দর করি। যদি আপনার পরিচিত কেউ এই সমস্যায় ভোগে, তাহলে তাকে সঠিক সাহায্য পেতে উৎসাহিত করুন। এবং প্রতিবন্ধী বিষয়ক যেকোনো তথ্য পেতে ভিজিট করুণ প্রতিবন্ধী বিডি ডট কম। 

Leave a Comment

x