অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

আল্লাহ নারী পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু যখন পরিপূর্ণকারী (স্বামী) দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যায় তখন একজন নারীর জীবনে অপূর্ণতা চলে আসে। এমতাবস্থায় তাকে জর্জরিত করে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা যেখানে মেজর সমস্যা হলো আর্থিক সমস্যা। 

বাংলাদেশ সরকার উক্ত বিষয়টি অনুধাবন করে  ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মত শুরু করে বিধবা ভাতা কর্মসূচি যা চলে আসছে বছরের পর বছর সফলতার হাত ধরে। আর আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করবো এই বিধবা ভাতা নিয়েই। জানাবো বিধবা ভাতা সম্পর্কে সবকিছু যেখানে থাকবে অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়মও। 

বিধবা ভাতা প্রদানের উদ্দেশ্য এবং কাদের জন্য? 

বিধবা ভাতা দেশের ওই সকল নারীদের জন্য যাদের স্বামী মারা গিয়েছে এবং দারিদ্রতায় আচ্ছন্ন। স্বাভাবিক ভাবেই যাদের স্বামী মারা যাওয়ার পর আর্থিক ভাবে অসচ্ছল হয়ে পরে, তারাই বিধবা ভাতা পাবে। তবে বিশেষ কন্ডিশন অনুযায়ী যারা স্বামীর কাছে তালাকপ্রাপ্তা কিংবা কোনো কারণে তাদের স্বামী ২ বছর যাবৎ খোজ খবর নেয় না তারাও বিধবা ভাতা এর অন্তর্ভুক্ত হবেন।

১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি সময়ের দিকে বাংলাদেশের সমাজসেবা অধিদপ্তর কতৃক এই সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। বিধবা ভাতা প্রদানের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হলো অসহায় বিধবা নারীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করা। 

বিধবা ভাতা আবেদন কিভাবে করতে হয় 

বিধবা ভাতা আবেদন করার পদ্ধতি দুইটি রয়েছে। ১) আপনি সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে করতে পারবেন। ২) আপনি যে এরিয়াতে থাকেন সে এরিয়ার ইউনিয়ন পরিষদ গিয়ে আবেদন করতে পারেন; অথবা সমাজসেবা অধিদপ্তরে গিয়ে সরাসরি কথা বলতে পারেন। 

তবে সুযোগ সুবিধা ও সহজ কার্যের জন্য অনলাইনে আবেদন করাটাই বেশি শ্রেয় এবং গ্রহনযোগ্য। তাই এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানাবো অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে যা পরবর্তী ধাপ গুলোতে বিস্তারিত বলা আছে। 

বিধবা ভাতা প্রাপ্তির শর্তাবলী 

হ্যাঁ, এটা ঠিক যে বিধবা ভাতা পাবে এমন নারী যার স্বামী মারা গিয়েছে। তবে এটাই যথেষ্ট নয়, রয়েছে আরো বেশ কিছু শর্ত যা অবশ্যই মানতে হবে একজন বিধবা ভাতা প্রত্যাশী নারীর। সে শর্ত গুলো নিম্মে উপস্থাপন করা হলো: 

১) আবেদনকারী যে এরিয়াতে অবস্থান করছে বা যে স্থান থেকে আবেদন করছে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা হতে হবে। 

২) তার অবশ্যই জন্মনিবন্ধন কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে। 

৩) যাদের বয়স বেশি এবং যাদের স্বামী তাদের ত্যাগ করেছে অনেক দিন (সর্বনিম্ম দুই বছর) খোজ খবর নেয়নি তারা অগ্রাধিকার পাবে। 

৪) যারা দুঃস্থ, অসহায়, ভূমিহীন, ১৬ বছরের নিচে দুটি সন্তান আছে এমন নারীরা ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। 

৫) বিধবাকে অবশ্যই বার্ষিক গড় আয় ১২ হাজার টাকা কিংবা তার কম থাকতে হবে। এর বেশি আয় থাকলে এই ভাতা এর আওতায় আসবে না। 

৬) বাছাই কমিটির সিদ্ধান্তের পেক্ষিতে চুড়ান্ত সিলেকশন হবে। 

বিধবা ভাতা অনলাইন আবেদন 2024 

২০২৪ এ এসে কিভাবে বিধবা ভাতা অনলাইনে আবেদন করবেন সে বিষয়েই এবার জানানো হবে। বর্তমান সময়ে অনলাইন ভিত্তিক সকল কার্যক্রম হওয়াতে এই সুবিধা মানুষ ঘরে বসেই পাচ্ছে। তবে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে যা নিয়ে এবার জানানো হবে। 

বিধবা ভাতা আবেদন করতে কি কি লাগে 

এতক্ষন ধরে বিধবা ভাতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম এই পর্যায়ে বিধবা ভাতা আবেদন করার ক্ষেত্রে যে সকল জিনিসের প্রয়োজন আছে সেগুলো নিয়ে জানাবো। 

১) ভাতা প্রত্যাশীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি 

২) স্বামীর মৃত্যু সনদের ফটোকপি 

৩) দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (অনলাইনের ক্ষেত্রে স্ক্যান কপি)

৪) সচল মোবাইল নাম্বার (যোগাযোগ ও টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে) 

৫) বিধবা ভাতা আবেদন ফরম পূরণ করে জমা 

ব্যাস, এতেই আপনার হয়ে যাবে। এবার আসুন জেনে নেই আবেদন কিভাবে করবেন সে বিষয়ে। 

অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম (ধাপে ধাপে স্ক্রিনশট সহ) 

এই পর্যায়ে অনলাইনে কিভাবে বিধবা ভাতা এর জন্য আবেদন করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে ধাপে ধাপে জানাবো। 

১ম ধাপ: ওয়েবসাইটে প্রবেশ 

অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রথমেই সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে [https://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication] চলে যেতে হবে। 

বিঃদ্রঃ এটা প্রায় সময় বন্ধ থাকে, তাই নিদিষ্ট আবেদন সময়ের পূর্বে কিংবা পরে যদি আবেদনের অপশন না দেখেন তবে বিচলিত হবেন না। 

২য় ধাপ: ভেরিফিকেশন 

এই পর্যায়ে আপনাকে ভেরিফাই করা হবে NID অথবা জন্ম নিবন্ধন নাম্বার দ্বারা। NID card এর ক্ষেত্রে ১৭ নাম্বার ও স্মার্ট কার্ড হলে ১০ টি নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে সাবমিট করে যাচাই অপশনে ক্লিক করুন। 

এরপর অটোমেটিক ভাবেই আপনার তথ্য গুলো ফিলআপ হয়ে যাবে, এখানে যদি কোনো তথ্য মিসিং বা ভুল থাকে তবে সেটা সংশোধন করে দিন। এখানে বেশ কিছু তথ্য দিতে হতে পারে। নিচের দেয়া ছবিটি দেখলে সব কিছু বুঝে যাবেন। 

এই পর্যায়ে আপনাকে বেশ কিছু তথ্য ফুলফিল করতে হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • বৈবাহিক অবস্থা 
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা 
  • পরিবারের সদস্য সংখ্যা 
  • পেশা 
  • বার্ষিক আয় 
  • স্বাস্থ্যগত বা কর্মক্ষমতা সংক্রান্ত তথ্য 
  • সরকারি কিংবা বেসরকারি আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির তথ্য 
  • বাসস্থানের তথ্য 
  • ভূমির পরিমাণ 

এই জাতীয় তথ্য গুলো ফরমটিতে পূরণ করতে হবে। 

৩য় ধাপ: আবেদনকারীর যোগাযোগের ঠিকানা

এই ধাপে আপনাকে আরো কিছু তথ্য দিতে হবে তবে এগুলো আপনার সাথে যোগাযোগ এবং ভাতা প্রদানের মাধ্যম সম্পর্কে। এই ধাপে যে তথ্য গুলো দিতে হবে সেগুলো হলো: 

১) আবেদনকারীর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা 

২) নিজস্ব বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড নাম্বার

৩) মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট নাম্বার দিতে হবে (বিকাশ/নগদ/রকেট)

৪র্থ ধাপ: আবেদন যোগ্যতা সংক্রান্ত তথ্য 

উপরের ছবির দিকে তাকালেই বুজতে পারবেন এখানে কি কি তথ্য দিতে হবে। মূলত যে বিষয় গুলো আপনাকে eligible করবে ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সে তথ্য গুলো একেক করে বসিয়ে যাবেন। এটা স্পেসিফিক করে প্রতিটা উল্লেখ্য করার কিছু নেই আপনি যখন দেখবেন নিজের সম্পর্কে তেমন ভাবেই তথ্য দিতে থাকবেন। 

সব তথ্য গুলো ঠিকঠাক ভাবে সাবমিট করা হয়ে গেলে সংরক্ষন নামক বাটনে ক্লিক করে জমা দিয়ে দিন। কিছুক্ষন সময় নিবে তারপর একটি পপ-আপ আসবে যেখানে Print নামক আরেকটি অপশন পাবেন। 

এবার Print অপশনটিতে ক্লিক করে আবেদন পত্রটি ডাউনলোড কিংবা প্রিন্ট আউট করে রেখে দিবেন। কেননা এটা পরবর্তীতে এটা সমাজসেবা অধিদপ্তরে গিয়ে জমা দিতে হবে। 

বিধবা ভাতা আবেদন ফরম 

চাইলে আপনি বিধবা ভাতা আবেদন ফরমটি সরাসরি ডাউনলোড করে প্রিন্ট আউট করে নিতে পারেন এবং সকল তথ্য গুলো হাতে লিখে জমা দিতে পারবেন।

বিধবা ভাতা আবেদন ফরম PDF: এখানে ক্লিক করুন 

বিধবা ভাতা আবেদন সংক্রান্ত প্রশ ও উত্তর 

১) বিধবা ভাতা কত মাস পর পর দেওয়া হয়

সাধারণত প্রতি মাসের ভাতা হিসেব করা হলেও প্রতি ৩ মাস পর পর একত্রে ৩ মাসের ভাতা প্রদান করা হয় যা বছরে ৪বার পাওয়া যায়। 

২) বিধবা ভাতা কত টাকা 

২০২৪-২৫ অর্থবছরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিধবা ভাতা প্রতি মাসে ৫৫০ টাকা করে দেয়া হবে। তবে এটা সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়। 

৩) বিধবা ভাতা কত সালে চালু হয় 

১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর থেকে বিধবা ভাতা দেয়া চালু করা হয় আর এখন অব্দি এই ভাতা প্রদানের কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। 

পরিশেষে মন্তব্য

এই ছিলো ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিধবা ভাতা সংক্রান্ত সর্বশেষ নিয়ম অনুযায়ী সর্বশেষ তথ্য। আশা করি আর্টিকেলে দেখানো অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম অনুসরণ করে ঘরে বসেই বিধবা ভাতা এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাছাড়া আপনার যদি আরো অন্যান্য ভাতা সংক্রান্ত তথ্য জানতে হয় তবে আমাদের ওয়েবসাইটের ভাতা নামক ক্যাটাগরিটি অনুসরণ করুন। 

Visited 3,714 times, 26 visit(s) today

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *