গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম || ২০২৫ গর্ভবতী ভাতা পেতে কি লাগবে ও করণীয় কি? 

বাংলাদেশ সরকার দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গর্ভবতী মায়েদের সাহায্যের জন্য মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি এর আওতায় গর্ভবতী ভাতা প্রদান করা হয়। ২০২৫ অর্থবছরে গর্ভবতী ভাতা প্রাপ্তির জন্য নতুন নিয়ম ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজকের এই ব্লগে আমরা গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, আবেদন প্রক্রিয়া, এবং প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

গর্ভবতী ভাতা কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য

মূলত গর্ভবতী মায়েদের আর্থিক সাহায্য করা, তাদের পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং গর্ভকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণে সহায়তা প্রদানই গর্ভবতী ভাতার মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়।

গর্ভবতী ভাতার জন্য বরাদ্দ সংখ্যা

২০২৫ সালের জন্য গর্ভবতী ভাতা কর্মসূচির আওতায় সারা দেশের ৪৯৫টি উপজেলায় ৪৫৯৮টি ইউনিয়নের মাধ্যমে মোট ৩,৫৯,৬৪০ জন গর্ভবতী নারী এই ভাতা পেতে পারবেন। এক্ষেত্রে বরাদ্দ সংখ্যা হলো প্রতি ইউনিয়নে ৯ জন গর্ভবতী মা। তবে নির্দিষ্ট কিছু ইউনিয়নে প্রতি মাসে ১৫ জন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৫ জন গর্ভবতী ভাতা পাবেন। 

গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম

গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা

১) বয়স ভিত্তিক যোগ্যতা: গর্ভবতী মায়ের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখিত বয়সের ভিত্তিতে এটি নির্ধারণ করা হয়। 

২) গর্ভকালীন সময়কালীন যোগ্যতা: ভাতার জন্য আবেদন করার সময় গর্ভের বাচ্চার বয়স ৪ থেকে ৬ মাস হতে হবে। এর কম বা বেশি বয়সে আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। 

৩) আর্থিক অবস্থার যোগতা: দরিদ্র ও নিম্নআয়ের পরিবারের গর্ভবতী মায়েরা এই ভাতা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত। 

৪) সন্তানের সংখ্যার যোগ্যতা: শুধুমাত্র প্রথম এবং দ্বিতীয় সন্তানের জন্যই এই ভাতা প্রযোজ্য। তৃতীয় বা তার বেশি সন্তানের ক্ষেত্রে আবেদন করা যাবে না।

গর্ভবতী ভাতার বিশেষ শর্তাবলি

এই ভাতা পাওয়ার জন্য প্রতি মাসে নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। একবার আবেদন করলে পুরো ৩ বছরের জন্য ভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। শুধুমাত্র প্রথম এবং দ্বিতীয় সন্তানের জন্য আবেদন গ্রহণযোগ্য। তৃতীয় বা তার বেশি সন্তানের জন্য আবেদন করা যাবে না। আবেদনের সময় গর্ভের বাচ্চার বয়স ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে হতে হবে। ব্যাস এইটুকুই হলো এই ভাতা পাওয়ার শর্তাবলি। 

গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১) জাতীয় পরিচয়পত্র (ভোটার আইডি কার্ড): গর্ভবতী মায়ের নিজস্ব ভোটার আইডি কার্ড আবশ্যক। 

২) ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট: নিজের নামে বিকাশ, নগদ, বা রকেট অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। আবেদন করার আগে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। 

৩) এএনসি কার্ড: স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর থেকে প্রাপ্ত এন্টি নেনটাল কেয়ার (ANC) কার্ড জমা দিতে হবে।

গর্ভবতী ভাতার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

গর্ভবতী ভাতার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। প্রথমেই আসুন জেনে নেই কোথায় আবেদন করবেন? গ্রামীণ মায়েদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফি বাবদ ৪০ টাকা দিতে হবে। পৌরসভা এলাকায় জন্য পৌর ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে আবেদন করতে হবে।

তবে যারা ফ্রি আবেদন করতে চান, তারা উপজেলার তথ্য আপা বা তথ্য সেবাকারীর নিকট বিনামূল্যে আবেদন করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, রয়েছে অনলাইনে গর্ভবতী ভাতার জন্য আবেদন করার নিয়মও। 

এবার আসুন জেনে নেই আবেদনের সময়সীমা সম্পর্কে। মূলত প্রতি মাসের ১ তারিখ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হবে। ২০ তারিখের পর আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। 

যথাযথ নিয়মে আবেদন জমা দিলে তা যাচাই-বাছাই করা হবে। ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে আবেদন প্রাথমিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এবং উপজেলা কমিটির অনুমোদনের পর এক মাসের মধ্যে ভাতা পাওয়া যাবে।

গর্ভবতী ভাতা কত টাকা ও মেয়াদ কতদিন?

মায়েরা গর্ভবতী ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। ভাতার মেয়াদ মোট ৩৬ মাস (৩ বছর)। এতে করে সর্বমোট প্রাপ্ত অর্থ ২৮,৮০০ টাকা হবে।

গর্ভবতী ভাতার বিষয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা

১. গর্ভবতী ভাতা পেতে কতদিন সময় লাগে? 

উপজেলা কমিটির অনুমোদনের এক মাস পর ভাতা পাওয়া শুরু হয়।

২. আবেদন কোথা থেকে করতে হবে? 

ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা তথ্য আপার মাধ্যমে অথবা অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

৩. ফ্রি আবেদন করার সুযোগ কি আছে?

হ্যাঁ, তথ্য আপার মাধ্যমে বিনামূল্যে আবেদন করতে পারবেন।

৪. যদি ২০ তারিখের মধ্যে আবেদন না করা হয়, তাহলে কী হবে? 

ওই মাসে আবেদন করা সম্ভব নয়, তবে পরবর্তী মাসে আবেদন করতে পারবেন।

চুড়ান্ত মন্তব্য 

গর্ভবতী ভাতা কর্মসূচি দরিদ্র মায়েদের জন্য এক আশীর্বাদস্বরূপ। সঠিক তথ্য এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নির্ধারিত সময়ে আবেদন করলে এই ভাতা সহজেই পাওয়া সম্ভব। আশা করি এই আর্টিকেল দ্বারা গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবগত করতে সক্ষম হয়েছে। এড়াছাও যদি আরো কিছু জানার থাকে তবে কমেন্টে জিজ্ঞাস করতে পারেন, ধন্যবাদ। 

Leave a Comment

x