দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের টেলিফোন অপারেটিং প্রশিক্ষন দেবে এনএসবিপি

প্রিয় পাঠক প্রতিবন্ধী বিডি ডট কম এর পক্ষ থেকে একরাশ প্রিতি ও ভালবাসা গ্রহণ করবেন। আজ আমরা দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বিশেষ সু খবর নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। এই পোস্টে দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের টেলিফোন অপারেটিং প্রশিক্ষন বিষয়ক আলোচনা করা হবে। অনেকেই হয়ত ভাবছেন এই যুগে টেলিফোন অপারেটিং শিখে কি হবে। হ্যাঁ টেলিফোন অপারেটিং শেখার দরকার আছে।

কেন একজন দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির টেলিফোন অপারেটিং শেখা দরকার, টেলিফোন অপারেটিংয়ের গুরুত্ব কতটা সে সম্পর্কে স্ববিস্তরে আলোকপাত করব আশা করি। তাই সকল দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের কাছে প্রতিবন্ধী বিডি ডট কম এর বিশেষ অনুরোধ, আপনারা সবাই এই পোস্টটি অবশ্যই সম্পুর্ণ পড়বেন। কারণ টেলিফোন অপারেটিং ছাড়াও দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের জন্য গুরুত্বপুর্ণ অনেক বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

এনএসবিপি বাংলাদেশ

২০০৬ সালে লায়ন ময়িন উদ্দিন চৌধরীর হাত ধরে এনএসবিপি বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। এনএসবিপির পুর্ণরুপ হল “জাতীয় দৃষ্ট্রিহীন ও দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধী সংস্থা”। এই প্রতিষ্ঠান সারা বাংলাদেশ ব্যাপি দৃষ্ট্রিহীন ও দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে। খুলনায় এনএসবিপির আবাসিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র আছে। সেখানে দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের বিনামুল্যে বিভিন্য প্রশিক্ষন দেয়া হয়।

এনএসবিপি তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সারা বাংলাদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। সাধারণত বিষিষ্ট ব্যক্তি এবং স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে সংগ্রহিত অর্থ দিয়ে এনএসবিপি কার্যক্রম পরিচানা করে। জন সাধারণের টাকায় পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্য জীবনমুখি প্রশিক্ষন প্রদান করে।

দৃষ্ট্রিহীন এবং দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা নিশ্চিতে এনএসবিপি বাংলাদেশ কাজ করে আসছে। এনএসবিপির সকল সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে পৃথক পোস্ট করা হবে। সে সকল পোস্টে আমরা প্রতিটি সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে আলাদা আলাদা ভাবে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই পোস্টে আমরা মুলত টেলিফোন অপারেটিং প্রশিক্ষন সম্পর্কে আলোচনা করব।

টেলিফোন অপারেটিং প্রশিক্ষন

বর্তমান যুগ প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগ। এই যুগে প্রতিবন্ধীরা কেন প্রযুক্তির কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। তাই সকল প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রযুক্তি নিশ্চিত করতে এনএসবিপি বাংলাদেশ কাজ করে আসছে। আর দশজন সাধারণ প্রতিবন্ধীরা খুব সহজেই প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে পারে। কিন্তু দৃষ্ট্রিহীনদের জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করাটা বেশ কঠিন। আর এই কঠিন গুরু দায়িক্তই গ্রহণ করেছে এনএসবিপি বাংলাদেশ।

এনএসবিপি দক্ষ প্রশিক্ষদের মাধ্যমে দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের টেলিফোন অপারেটিং প্রশিক্ষন প্রদান করে। আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, দৃষ্ট্রিহীন ব্যক্তিরা তো চোখে দেখতে পায় না। তাহলে তারা টেলিফোন চালাবে কি ভাবে। আপনাদের এই প্রশ্নের জবাব হল: মুখস্ত বিদ্যা ব্যবহার করে এবং অনুশিলনের মাধ্যমে চোখে না দেখেও টেলিফোন অপারেটিং করা সম্ভব। তাই চোখে কিছুই দেখতে না পেলেও টেলিফোন অপারেটিং প্রশিক্ষন গ্রহণ করা সম্বব এবং টেলিফোন অপারেটিং করা সম্ভব।

টেলিফোন অপারেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান চাকরির বাজারে দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের উপযোগী চাকরির খুবই সংকট। আর দশ জন সাধারণ প্রতিবন্ধীরা যে সকল চাকরি বা কাজ করতে পারে। দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীরা সে সকল কাজ বা চাকরি করতে পারে না। দৃষ্ট্রি প্রতিবন্দীরা সাধারণত রিসেপশনিস্টের কাজ সহজে করতে পারে। তাই বিভিন্য প্রতিষ্ঠান যারা দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের চাকরি দিতে আগ্রহী।

তারা দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের রিসেপশটিস্টের কাজ দিয়ে থাকে। রিসেপশনিস্টের কাজ করতে হলে কম্পিউটার এবং টেলিফোন অপারেটিং জানতে হয়। তাই কোন দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীর টেলিফোন অপারেটিং জানা থাকলে সে সহজে রিসেপশনিস্টের জব পেতে পারে।

টেলিফোন অপারেটিং কোর্স

এনএসবিপি দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের ফ্রিতে টেলিফোন অপারেটিং কোর্স করিয়ে থাকে । কেবলমাত্র দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের-ই প্রশিক্ষন দেয়া হয়। তাই যারা অন্যান্য প্রতিবন্ধী আছেন তারা এনএসবিপিতে প্রশিক্ষন গ্রহণ করতে পারবেন না। প্রশিক্ষন চলাকালীন সময়ে থাকা ও খাওয়া সম্পুর্ণ ফ্রি। প্রশিক্ষনার্থীকে কোন কোর্স ফি দিতে হবে না। প্রশিক্ষন শেষে যাতায়তা ভাড়া প্রদান করা হয়। তবে প্রশিক্ষন গ্রহণের জন্য কোন প্রকার ভাতা কিংবা সম্মানি প্রদান করা হবে না।

প্রশিক্ষনের মেয়াদকাল

এনএসবিপি দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধীদের যে টেলিফোন অপারেটিং প্রশিক্ষন প্রদান করে সেই প্রশিক্ষনের মেয়াদকাল ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত হতে পারে। প্রশিক্ষনার্থীর মেধার উপর প্রশিক্ষনের সময় নির্ভর করে। যে ব্যক্তি যত তারাতারি টেলিফোন অপারেটিং শিখে নিতে পারবে তার প্রশিক্ষন তত দ্রæত শেষ হবে।

আবাসিক হলের পরিবেশ কেমন

এনএসবিপির নিজশ্ব আবাসিক হল আছে। হলের পরিবেশ যথেষ্ট ভাল। সুন্দর চার তলা বিষিষ্ট আবাসিক হল আছে এনএসবিপির। বিদ্যুত ফ্যান ও লাইটের ব্যবস্থা আছে। তবে ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা নেই। প্রশিক্ষন চলা কালে আপনার থাকার জন্য এনএসবিপি লেপ, বালিশ, তোষক বিছানার চাদর ইত্যাদি সরবরাহ করবে। তবে আপনি চাইলে বিছানার চাদর এবং বালিশের চাদর বাড়ী থেকে নিয়ে যেতে পারবেন। আপনার পরিধেয় পোষাক নিজেকে সাথে আনতে হবে। এনএসবিপি কোন পোষাক সরবরাহ করে না।

খাবারের মান কেমন

সকালের খাবারে কোন দিন খিচুরি ভাতের সাথে আলু ভরতা, কোন দিন সাদা ভাতের সাথে ডাল বা সবজি প্রদান করা হবে। দুপুরের খাবারে সাদা ভাতের সাথে গরু বা খাসির মাংশ সরবরাহ করা হয়। কোন কোন দিন সাদা ভাতের সাথে ডিমের তরকারী সরবরাহ করা হয়। রাতের খাবারে সাদা ভাতের সাথে ডাল সবজি কিংবা ডিমের তরকারী সরবরাহ করা হয়। প্রশিক্ষন চলাকারীন সময়ে প্রশিক্ষনের ফাকে নাস্তা দেয়া হয়।

আবেদন করবেন যেভাবে

আপনি যদি প্রশিক্ষন গ্রহণ করতে চান তবে প্রথমে আপনাকে এনএসবিপির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। যোগাযোগ করার জন্য কল করুন এই নাম্বারে ০১৭৯৯ ৮৩৩৪০৩। কল করে আপনার নাম, ঠিকানা, বয়স্ক এবং পেশা উল্লেখ করে বলুন আপনি টেলিফোন অপারেটিং প্রশিক্ষন গ্রহণ করতে চান। প্রশিক্ষন গ্রহণের জন্য অবশ্যই আপনাকে দৃষ্ট্রি প্রতিবন্ধী হতে হবে। অফিস থেকে আপনাকে যাবতীয় তথ্যাদি জানিয়ে দেয়া হবে। যেমন কবে প্রশিক্ষন শুরু হবে, কবে আপনাকে এনএসবিপির প্রশিক্ষন কেন্দ্রে আসতে হবে, কয় দিন থাকতে হবে ইত্যাদি।

Visited 16 times, 4 visit(s) today

Leave a Comment