প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলা: প্রতিবন্ধীদের জন্য কয়েকটি খেলার নাম

প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলা করার বিষয়ে আমরা অনেকেই অবগত নই। তবে তাদের জন্যও রয়েছে স্পেসিফিক কিছু খেলা। প্রতিবন্ধীদের জন্য কয়েকটি খেলার মধ্যে রয়েছে হুইলচেয়ার বাস্কেটবল, ব্লাইন্ড ফুটবল ও ক্রিকেট, সিটিং ভলিবল, অ্যাডাপটিভ সাইক্লিং ইত্যাদি। প্রতিবন্ধীদের জন্য খেলার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলা তাদের খেলাধুলা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। 

আসলে সঠিক প্রশিক্ষণ ও সুযোগ পেলে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সাফল্য অর্জন করতে পারে। স্বাভাবিক মানুষের মতই খেলাধুলা তাদের জীবনে আনন্দ ও প্রেরণা যোগায়। তাই প্রতিবন্ধীদের জন্য খেলার সুযোগ বাড়ানো উচিত। এই উদ্যোগ তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানবো প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলা সম্পর্কে পাশাপাশি আরো জানবো প্রতিবন্ধীদের জন্য কয়েকটি খেলার নাম ও সেগুলো খেলার নিয়ম সম্পর্কে। 

প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

প্রতিবন্ধীদের জন্য খেলার গুরুত্ব অপরিসীম। খেলাধুলা শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র তাদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়ায় না, মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি করে। শারীরিক ও মানসিক ভাবে যেসব উপকারিতা পাওয়া যাবে সেগুলো হলো:

  • শক্তি বৃদ্ধি: নিয়মিত খেলার মাধ্যমে পেশির শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • সঞ্চালন ক্ষমতা: খেলাধুলা সঞ্চালন ক্ষমতা উন্নত করে।
  • বিষণ্ণতা দূর: খেলাধুলা শরীরের বিভিন্ন হরমোন সক্রিয় রাখে। 
  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: খেলাধুলা আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে।
  • মানসিক চাপ কমানো: খেলাধুলা মানসিক চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রতিবন্ধীদের জন্য কয়েকটি খেলার নাম ও খেলার নিয়ম 

হুইলচেয়ার বাস্কেটবল

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য হুইলচেয়ার বাস্কেটবল একটি অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। এটি শরীরচর্চা এবং মানসিক সুস্থতার জন্য খুবই কার্যকর। খেলার মাধ্যমে শারীরিক সক্ষমতা বাড়ে এবং সামাজিক সংযোগও বৃদ্ধি পায়।

হুইলচেয়ার বাস্কেটবল প্রথম শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, যখন যুদ্ধাহত সৈনিকদের পুনর্বাসনের জন্য এটি চালু করা হয়। এরপর থেকে, এই খেলা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পায় এবং অনেক প্রতিযোগিতা এবং টুর্নামেন্টে খেলা হয়।

হুইলচেয়ার বাস্কেটবল খেলার নিয়ম

১) খেলার মাঠের মাপ সাধারণ বাস্কেটবল কোর্টের মতই হয়। হুপের উচ্চতা প্রায় ১০ ফুট এবং বলের মাপও সাধারণ বাস্কেটবলের মতোই।

২) প্রতিটি দলে পাঁচজন খেলোয়াড় থাকে। 

৩) খেলোয়াড়রা হুইলচেয়ারে বসে বল নিয়ে খেলে। খেলোয়াড়দের হুইলচেয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং বল নিক্ষেপের দক্ষতা থাকতে হবে।

৪) সাধারণ বাস্কেটবলের মতোই, ৩ পয়েন্ট, ২ পয়েন্ট এবং ফ্রি থ্রো থেকে ১ পয়েন্ট পাওয়া যায়। খেলা ৪০ মিনিটের হয়।

৫) একজন খেলোয়াড় বল নিয়ে দু’বার হুইলচেয়ারের চাকা ঘুরাতে পারে এবং তারপর বল ড্রিবল করতে হয় অথবা অন্য খেলোয়াড়কে পাস করতে হয়।

ব্লাইন্ড ফুটবল

প্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন খেলার মধ্যে ব্লাইন্ড ফুটবল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। এটি মূলত চোখের দৃষ্টি হারানো খেলোয়াড়দের জন্য। ব্লাইন্ড ফুটবলে বিশেষ নিয়ম এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। এই খেলা বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায়ও একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।

ব্লাইন্ড ফুটবল প্রথম শুরু হয় ১৯৮০ সালে স্পেনে। [] ১৯৯৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল ব্লাইন্ড স্পোর্টস ফেডারেশন (IBSA) আনুষ্ঠানিকভাবে এই খেলাটি অন্তর্ভুক্ত করে। ২০০৪ সাল থেকে ব্লাইন্ড ফুটবল প্যারালিম্পিক গেমসের অংশ হয়। 

ব্লাইন্ড ফুটবল খেলার নিয়মাবলী

১) মাঠ হবে ৪০ মিটার লম্বা এবং ২০ মিটার চওড়া। এবং বলটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা যাতে ভিতরে একটি ঘণ্টা থাকে, যা দৃষ্টিহীন খেলোয়াড়দের বলের অবস্থান জানাতে সাহায্য করে।

২) প্রতিটি দলে পাঁচ জন খেলোয়াড় থাকে, যার মধ্যে চার জন দৃষ্টিহীন এবং একজন গোলকিপার। খেলোয়াড়দের চোখ বিশেষ পট্টি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় যাতে সবাই সমানভাবে খেলতে পারে। এবং গোলকিপার সাধারণত সম্পূর্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে থাকে।

৩) ম্যাচের সময় ২৫ মিনিটের দুটি অর্ধ, মোট ৫০ মিনিট হয়। যেখানে দুটি অর্ধের মধ্যে ১০ মিনিটের বিরতি।

৪) খেলোয়াড়েরা মাঠের তিনটি ভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে: রক্ষক অঞ্চল, মধ্য অঞ্চল এবং আক্রমণ অঞ্চল। প্রতিটি অঞ্চলে একজন গাইড থাকে যারা খেলোয়াড়দের দিক নির্দেশনা দেয়।

৫) শুধুমাত্র দৃষ্টিহীন খেলোয়াড়রা গোল করতে পারে। তাছাড়া সাধারণ ফুটবলের মতোই ফাউল ও পেনাল্টি দেওয়া হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে নিয়মগুলো আলাদা হতে পারে। খেলোয়াড়েরা বলের অবস্থান জানাতে “ভোই” (Voy) শব্দ ব্যবহার করে, যা স্প্যানিশ ভাষায় “আমি আসছি” অর্থে ব্যবহৃত হয়।

ব্লাইন্ড ক্রিকেট 

ব্লাইন্ড ক্রিকেট মূলত দুই ধরনের। একটি শারীরিক ভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের অন্যটি অন্ধদের জন্য বিশেষ ভাবে। সেগুলো হলো: ক্রিকেট ফর দ্য পারসন উইথ ডিসঅ্যাবিলিটি এবং ব্লাইন্ড ক্রিকেট।

দৃষ্টিহীন বা ব্লাইন্ড ক্রিকেট বেশ পরিচিত, যেখানে খেলোয়াড়রা টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি খেলেন এবং তাদের জন্য বিশ্বকাপেরও আয়োজন করা হয়। এখানে ৩ টি ক্যাটাগরিতে খেলোয়াড়দের শ্রেণি বিভাগ করা হয়:

  • বি-১ ক্যাটাগোরি: পুরোপুরি অন্ধ খেলোয়াড়।
  • বি-২ ক্যাটাগোরি: আংশিক অন্ধ খেলোয়াড়।
  • বি-৩ ক্যাটাগোরি: কিছুটা দেখতে পান এমন খেলোয়াড়।

খেলার নিয়ম

প্রতিটি দলে ১১ জন খেলোয়াড় থাকেন। ৪ জন পুরোপুরি অন্ধ (বি-১), ৩ জন আংশিক অন্ধ (বি-২), এবং ৪ জন কিছুটা দেখতে পান (বি-৩)।

চিহ্নিতকরণ:

  • বি-১: ডান বাহুতে সাদা রিস্টব্যান্ড বা জার্সিতে সাদা স্ট্রাইপ।
  • বি-২: ডান বাহুতে লাল রিস্টব্যান্ড বা জার্সিতে দুটি সাদা স্ট্রাইপ।
  • বি-৩: ডান বাহুতে নীল রিস্টব্যান্ড বা জার্সিতে তিনটি সাদা স্ট্রাইপ।

ওয়ানডে নিয়ম: ৪০ ওভারের ম্যাচ, সময় সীমা ৩ ঘণ্টা। সময়সীমার মধ্যে ওভার শেষ না করলে প্রতিপক্ষ পেনাল্টি রান পায়।

টেস্ট ম্যাচ নিয়ম: তিনদিনের ম্যাচ, প্রতিদিন ৮০ ওভার, ৬ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ ওভার বি-১ ক্যাটাগোরির বোলারদের দিয়ে করাতে হয়।

ব্যাটিং এবং রানিং: বি-১ ব্যাটসম্যানদের ১ রান আসলে ২ রান হিসেবে গণ্য হয়। বি-১ এবং বি-২ ব্যাটসম্যানরা রানার নিতে পারেন।

বোলিং এবং ফিল্ডিং: বল নিচ দিয়ে গড়িয়ে মারতে হয়। বল করার আগে ‘রেডি’ বলতে হয় এবং ব্যাটসম্যানের প্রতিউত্তরে ‘ইয়েস’ বলার পর ‘প্লে’ বলে বল করতে হয়।

সিটিং ভলিবল

সিটিং ভলিবল একটি প্যারালিম্পিক খেলা যা মূলত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি সাধারণ ভলিবল খেলার একটি রূপ, তবে এর কিছু বিশেষ নিয়ম ও ধরণ রয়েছে যা খেলাটিকে অন্যান্য ভলিবল থেকে আলাদা করে। 

সিটিং ভলিবল খেলা ১৯৫৬ সালে নেদারল্যান্ডসে শুরু হয়েছিল এবং ১৯৮০ সালে প্যারালিম্পিক গেমসে প্রথম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। খেলাটির মূল উদ্দেশ্য হল শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্রিয় রাখার পাশাপাশি তাদের মধ্যে সামাজিকতা ও দলগত কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

সিটিং ভলিবল খেলার নিয়ম

১) কোর্টের আকার ১০ মিটার লম্বা ও ৬ মিটার চওড়া। এবং নেটের উচ্চতা পুরুষদের জন্য ১.১৫ মিটার ও মহিলাদের জন্য ১.০৫ মিটার হবে।

২) প্রতিটি দলে ৬ জন খেলোয়াড় থাকে। অতিরিক্ত খেলোয়াড় থাকতে পারে যারা প্রয়োজন হলে পরিবর্তিত হতে পারে।

৩) খেলোয়াড়রা মাটিতে বসে খেলে। খেলার সময় খেলোয়াড়দের গ্লুটিয়াল অংশ (নিতম্ব) মাটি স্পর্শ করে থাকতে হবে।

৪) বল সার্ভিস করার সময় খেলোয়াড়ের নিতম্ব মাটি স্পর্শ করতে হবে। বল তিনবারের বেশি না স্পর্শ করেই প্রতিপক্ষের কোর্টে পাঠাতে হবে। বল যখনই মাটিতে স্পর্শ করবে তখনই পয়েন্ট শেষ হবে এবং প্রতিপক্ষ পয়েন্ট পাবে।

৫) খেলা পাঁচটি সেটে বিভক্ত। একটি দল যদি তিনটি সেট জিতে যায় তবে খেলা শেষ হবে। প্রতিটি সেট ২৫ পয়েন্টে শেষ হয়, তবে অন্তত ২ পয়েন্টের ব্যবধান থাকতে হবে।

অ্যাডাপটিভ সাইক্লিং

অ্যাডাপটিভ সাইক্লিং প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি উত্তম খেলা। এটি তাদের সক্রিয় রাখে এবং সাইক্লিংয়ের আনন্দ উপভোগ করতে দেয়। এই সাইক্লিং বিভিন্ন ধরনের সাইকেল ও সহায়ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাস্টমাইজ করা হয়, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের ক্ষমতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সাইকেল চালাতে পারে।

অ্যাডাপটিভ সাইক্লিং এর ধরণ

১) হ্যান্ডসাইকেল: এটি হাত দিয়ে চালানো হয়, পায়ের পরিবর্তে। বিশেষ করে পায়ের সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী।

২) ট্রাইসাইকেল: এটি তিনটি চাকা নিয়ে তৈরি, যাতে ভারসাম্য রাখতে সুবিধা হয়। শিশু ও ভারসাম্যের সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী।

৩) ট্যান্ডেম সাইকেল: দুটি সিট ও পেডাল থাকে, একটি সামনে ও একটি পিছনে। দৃষ্টিহীন বা দৃষ্টিশক্তি কম এমন ব্যক্তিদের জন্য।

৪) রেসিং হ্যান্ডসাইকেল:বিশেষ করে প্রতিযোগিতার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। উচ্চ গতি ও অল্প ওজনের।

স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

অ্যাডাপটিভ সাইক্লিংয়ের অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা:

  • কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উন্নত করে
  • মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে
  • পেশীর শক্তি বাড়ায়
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

অ্যাডাপটিভ সাইক্লিং প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী খেলা। এটি তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

Frequently Asked Questions

প্রতিবন্ধীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা কোনটি?

প্রতিবন্ধীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো প্যারালিম্পিক্স স্পোর্টস, বিশেষ করে হুইলচেয়ার বাস্কেটবল, সিটিং ভলিবল। এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া ইভেন্ট থাকে, যা তাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।

প্রতিবন্ধীরা কি কি খেলা খেলতে পারে?

প্রতিবন্ধীরা বাস্কেটবল, দৌড়, টেবিল টেনিস, এবং প্যারালিম্পিক গেমসের বিভিন্ন খেলা খেলতে পারে।

প্রতিবন্ধীদের খেলার প্রয়োজন কেন?

প্রতিবন্ধীদের খেলার প্রয়োজন তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সহায়ক। খেলাধুলা আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি করে।

চুড়ান্ত মন্তব্য 

প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলা শুধুমাত্র বিনোদন নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য। খেলার মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে, সমাজের সাথে ভালোভাবে মিশতে পারে। প্রতিবন্ধীদের জন্য কয়েকটি খেলার নাম ও খেলার নিয়ম জেনে তাদের জন্য খেলার ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে জীবনের মান উন্নত করতে সাহায্য করা উচিৎ। আমাদের সবার উচিত তাদেরকে এই খেলা গুলোতে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা। প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও তাদের বিষয়ে জানতে অনুসরণ করুন প্রতিবন্ধী বিডি নামক ওয়েবসাইটটি, ধন্যবাদ। 

Visited 6,583 times, 15 visit(s) today

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *