প্রতিবন্ধী স্কুলের নতুন খবর: এমপিও করার দাবিতে বিক্ষোভ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর
প্রতিবন্ধী স্কুলের নতুন খবর: বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য যে স্কুলগুলো কাজ করছে, সেগুলোর প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেকটা অবহেলিত এবং অবজ্ঞিত, যার ফলে তাদের জন্য বিশেষ বিদ্যালয়গুলোর যথাযথ স্বীকৃতি ও এমপিও (মানব সম্পদ প্রাপ্তি) পাওয়ার পথ অনেক সময় বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবন্ধী শিক্ষার এই খাতের সাথে জড়িত বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছেন। সম্প্রতি, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি এবং এমপিও পাওয়ার দাবিতে একটি বড় ধরনের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছেন। এই প্রতিবেদনটি সেই আন্দোলন এবং তাদের দাবির বিস্তারিত তুলে ধরবে।
প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর সমস্যার বাস্তবতা
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য মোট ১৭৭২টি বিদ্যালয় রয়েছে, যা বিশেষভাবে তাদের জন্য শিক্ষা প্রদান করে। তবে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কোন ধরনের স্বীকৃতি বা এমপিও (এমপ্লয়মেন্ট অর্ডার) পায়নি। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য কাজ করা এসব স্কুলগুলোর অনেক শিক্ষক এবং কর্মচারী এখনও বেতন ও অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার ৩০০০ প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেয় এবং এমপিওর আওতায় আনে, কিন্তু প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলো এর বাইরে থেকে যায়।
এদের মধ্যে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোর মধ্যে রয়েছে অটিস্টিক এবং অন্য ধরনের শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি পাঠ্যক্রম এবং প্রশিক্ষণ। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই বিদ্যালয়গুলোকে কোন ধরনের স্বীকৃতি বা এমপিও দেওয়া হয়নি। ফলে, এই স্কুলগুলোতে কাজ করা প্রায় ৫৪,০০০ শিক্ষক এবং কর্মচারী মানবেতন জীবনযাপন করছে। তাদের কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগ সত্ত্বেও কোনো সরকারী সুবিধা বা সমর্থন তারা পাচ্ছেন না।
প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের জন্য সরকারের কাছে দাবি
এমপিও এবং স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা একযোগে সরকারের কাছে কিছু বিশেষ দাবির কথা জানিয়েছেন। তাদের দাবি, যথাযথ কর্তৃপক্ষ তাদের বিদ্যালয়গুলোকে অবিলম্বে স্বীকৃতি এবং এমপিও প্রদান করুক, যাতে তারা মানবিকভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। তারা দাবি করেছেন, গত কয়েক বছরে তাদের সাথে অনেকবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
বিশেষ করে, ২০০৯ সালের পর থেকে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের এমপিও প্রদান করার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি গ্রহণ করা হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্বে আসার পর ১৮টি স্কুল এমপিও পেয়েছিল, কিন্তু ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা মাত্র ১৮টি। এরপর থেকে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলো এ ধরনের স্বীকৃতি বা এমপিও পাওয়ার জন্য আন্দোলন করে চলেছে।
১৭৭২টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের দাবি
এমপিও এবং স্বীকৃতির জন্য সংগ্রামী এই শিক্ষকরা দাবি করেছেন, তারা ১৭৭২টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের জন্য স্বীকৃতি এবং এমপিও দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছেন। এই বিদ্যালয়গুলোতে দেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ এবং কাউন্সেলিংসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে এই স্কুলগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করছে, তবে সরকারের সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে তারা দিন দিন চরম দুর্দশার সম্মুখীন হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার প্রতি এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা নিজেরা কোনো ধরনের সরকারি সাহায্য বা বেতন ছাড়াই তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ, সরকারি পর্যায়ে এই বিদ্যালয়গুলোর প্রতি সঠিক মনোযোগ বা সমর্থন নেই, যা তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অঙ্গীকার
গত বছর, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী দীপুমনি এবং বর্তমান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে একাধিক আলোচনা করেছেন এবং তাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, অচিরেই এই বিদ্যালয়গুলোর এমপিও ব্যবস্থা করা হবে। তবে, বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এই কারণে, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং জনগণের পাশে থাকা
এখন প্রশ্ন হলো, সরকারের প্রতিশ্রুতি কবে পূর্ণ হবে? প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর প্রতি যদি সরকার যথাযথ মনোযোগ না দেয়, তাহলে এই শিক্ষকরা কীভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন? যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাদের মানবিক এবং আর্থিক সহায়তা একান্ত প্রয়োজন। সরকার যদি এই বিদ্যালয়গুলোর এমপিও এবং স্বীকৃতি দেয়, তাহলে তারা সমাজে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালীভাবে স্থাপন করতে পারবে।
এছাড়া, আন্দোলনে যুক্ত স্কুলগুলোর ৫৪,০০০ শিক্ষক এবং কর্মচারী যদি এমপিও পায়, তাহলে তাদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হবে। যা শিক্ষার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।
চুড়ান্ত মন্তব্য
এখন সময় এসেছে যে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর প্রতি সরকারের মনোযোগ বৃদ্ধি করা হবে। এই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের ও কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি এখন যেন বাস্তবায়ন হয়। সরকারের সদিচ্ছা এবং উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আরও উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। তবে, এটি তখনই সম্ভব, যখন সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং তাদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা হবে।
এই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের আন্দোলনটি শুধুমাত্র তাদের স্বীকৃতি এবং এমপিও পাওয়ার দাবিতে নয়, বরং পুরো দেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি মাইলফলক হতে পারে। যে শিক্ষা এবং চিকিৎসা সেবা তারা পাচ্ছে, তা সরকারের সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়। সুতরাং, সরকারের উচিত এই বিদ্যালয়গুলোকে অবিলম্বে স্বীকৃতি এবং এমপিও প্রদান করা, যাতে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত তৈরি করা যায়। এই ছিলো প্রতিবন্ধী স্কুলের নতুন খবর, এই বিষয়ে পরবর্তী আপডেট জানতে অনুসরণ করুন প্রতিবন্ধী বিডি ডট কম ওয়েবসয়াইটের সংবাদ ক্যাটাগরিটি।