বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন পদ্ধতি (২০২৪) 

আমাদের সমাজে এমন অনেক সুবিধা বঞ্চিত বৃদ্ধ রয়েছে যারা সঠিক তথ্য না জানার কারনে তাদের হক (বয়স্ক ভাতা) থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের হক আদায়ে জানান দিতে সরকার থেকে গৃহীত কর্মসূচি বয়স্ক ভাতা প্রকল্পে “বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন পদ্ধতি” সম্পর্কে জানাবো এই আর্টিকেলে। শুরু করা যাক বয়স্ক ভাতা এর বিষয়টিকে ধরেই। 

বয়স্ক ভাতা কি?

বয়স্ক ভাতা হলো একটি সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা যা সরকারের পক্ষ থেকে বয়স্ক নাগরিকদের (নারী ও পুরুষ) আর্থিক সহায়তা করা হয়। এটি মূলত প্রবাসী, অবসরপ্রাপ্ত অথবা কর্মক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এমন পুরুষের ক্ষেত্রে ৬৫ বছর ও নারীদের ক্ষেত্রে ৬২ বছরের উর্ধে ব্যক্তিদের বয়স্ক ভাতা দেয়া হয়। এই ভাতার উদ্দেশ্য হলো বৃদ্ধ বয়সে মানসম্মত জীবন যাপন নিশ্চিত করা এবং তাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণে সহায়তা করা।

বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন যোগ্যতা

তবে শুধু বয়স্ক হলেই হবে না, মানতে হবে কিছু শর্ত বা থাকতে হবে কিছু যোগ্যতা। এগুলো Fullfill না থাকলে ভাতা পাওয়া যাবে না। এবার সে বিষয়েই বলছি:

১) আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

২) বয়স সর্বনিম্ম পুরুষের ক্ষেত্রে ৬৫ ও নারীদের ক্ষেত্রে ৬২ বছর হতে হবে।

৩) কোনো সরকারি অথবা বেসরকারি পেনশন প্রাপ্তি থাকলে আবেদনকারী ভাতা পাওয়ার জন্য অযোগ্য হবেন।

৪) নিম্ন আয়ের অধিকারী হতে হবে, অর্থাৎ বছরে গড় আয় ১০ হাজার টাকার নিচে থাকতে হবে।

৫) VGD Card (দুঃস্থ মহিলাদের) থাকলে হবে না। 

যে কারণে বয়স্ক ভাতা পাওয়া যাবে না 

বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু কারণ রয়েছে যা আবেদনকারীকে অযোগ্য করে তুলতে পারে। এরা বয়সে বৃদ্ধ হলেও ভাতা পাবে না, তারা হলো:

১) সরকারি বা বেসরকারি পেনশনপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

২) আবেদনকারীর নাম যদি কোন কারিগরি বা প্রশাসনিক ভুলের কারণে তালিকাভুক্ত না হয়।

৩) VGD কার্ড (দুঃস্থ মহিলাদের কার্ড) থাকলে বয়স্ক ভাতা পাবে না। 

৪) সরকারি অন্য কোনো খাত থেকে অনুদান পেলেও বয়স্ক ভাতা পাবে না। 

আবেদন কার্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

অনলাইনে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলো:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র।
  • স্ক্যান করা ছবি (যেহেতু অনলাইনে আবেদন করবেন)
  • বয়সের প্রমাণ (NID, Birth Certificate)
  • আয় প্রমাণপত্র (যদি প্রয়োজন হয়)।
  • ব্যাংক একাউন্ট / বিকাশ / নগদ নাম্বার 

বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া

এই পর্যায়ে জানাবো অনলাইনে কিভাবে আবেদন করবেন সে বিষয়ে। উল্লেখ্য যে, যারা ইতিমধ্যেই ভাতা প্রাপ্তির আওতায় চলে আসছেন তাদের এই পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই, যারা নতুন ইন্ট্রি করতে চাচ্ছেন তারাই নিম্মের পদ্ধতি অনুসরণ করুন। 

ধাপ ১ 

প্রথমেই সরকারি ওয়েবসাইট [http://mis.bhata.gov.bd] এ প্রবেশ করতে হবে। ড্যাশবোর্ড থেকে Online Application নামক অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। 

ধাপ ২ 

একটা বক্স দেখতে পারবেন যেটার প্রথমে NID Card এর নাম্বার ও পরেরটিতে জন্ম তারিখ লিখে “যাচাই” অপশনে ক্লিক করবেন। 

ধাপ ৩

NID কার্ডের আলোকে এই পর্যায়ে সকল তথ্য পূর্ণ হয়ে যাবে অটোমেটিক, যদি কোনোটি ভুল কিংবা মিসিং থাকে তবে সেটা দিয়ে দিবেন। 

ধাপ ৪ 

এই ধাপে আপনাকে Additionally বেশ কিছু তথ্য দিতে হবে। সেগুলো হলো: 

  • বৈবাহিক অবস্থা 
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • পরিবারের সদস্য সংখ্যা 
  • আপনার পেশা
  • বার্ষিক আয়
  • কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত তথ্য, 
  • সরকারি / বেসরকারি আর্থিক সুবিধার তথ্য 
  • বাসস্থান ও ভূমির পরিমাণ

ধাপ ৫

এই পর্যায়ে এসে আপনার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম গুলো জানাতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, ব্যাংকের নাম (অথবা বিকাশ/রকেট/নগদ একাউন্ট নাম্বার)

ধাপ ৬

এটাই সর্বশেষ ধাপ, এই পর্যায়ে আপনার যদি স্পেসিফিক কোনো যোগ্যতা থাকে তবে সেটার তথ্য উল্লেখ্য করবেন। এবং হয়ে গেলে আবেদনপত্রের প্রিন্ট বের করে নিবেন। 

অতঃপর, স্থানীয় এলাকার চেয়ারম্যান / মেয়রের কাছ থেকে তা সত্যায়িত বা স্বাক্ষর করিয়ে আনতে হবে। এবার আবেদনপত্র সহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো সমাজসেবা অধিদপ্তরে গিয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে। 

বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম

যদি অফলাইনে আবেদন করতে চান তবে বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম সাধারণত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ অফিস অথবা উপজেলা প্রশাসনিক অফিস থেকে সংগ্রহ করা যায়। অন্যথায় অনলাইনে যে পদ্ধতিতে জানানো হলো সেটাই আবেদন ফরম হিসেবে কাজ করে। ফরমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, বয়স, আয় ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য পূরণ করতে হয়।

বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর 

বয়স্ক ভাতা মাসে কত টাকা?

বর্তমানে (২০২৪) বয়স্ক ভাতা মাসে ৬০০ টাকা করে দেয়া হয়, গতবার যা ছিলো ৫০০ টাকা। এক্ষেত্রে বছরে মোট ৭২০০ টাকা পাওয়া যায়। তবে এটা সর্বদাই পরিবর্তনশীল। শুরুর দিকে (২০০৯-১০  অর্থবছর) বয়স্ক ভাতা দেয়া হতো ২৫০ টাকা যার পর্যায়ক্রমে এখন ৬০০ টাকা করে দেয়া হচ্ছে। 

বয়স্ক ভাতার টাকা কবে দেয়া হয়? 

বয়স্ক ভাতা যদিও প্রতি মাস অনুযায়ীই হিসেব করে থাকে তবে তা প্রতিমাসে পরিশোধ করে না, বরং ৩ মাস পরপর পরিশোধ করে। এক্ষেত্রে বছরে মোট ৪ বার বয়স্ক ভাতা হাতে পাওয়া যায়। 

মৃত বয়স্ক ভাতাভোগীর টাকা কি নমিনি তুলতে পারবে?

হ্যাঁ, এক্ষেত্রে ভাতাভোগী ব্যক্তি মারা গেলে ৭ দিনের মধ্যে মৃত্যুসনদ তৈরি করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিকট জানান দিতে হবে। এক্ষেত্রে নমিনি পুর্বের ৩ বকেয়া ভাতা + মৃত্যু মাসসহ আগামী দুই মাসের ভাতা একত্রে পাবে। 

পরিশেষে মন্তব্য

আশা করছি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন সংক্রান্ত সকল তথ্য জানাতে পেরেছি। মূলত বয়স্ক ভাতা প্রতিটা হতদরিদ্র বৃদ্ধ ব্যক্তিদের হক এবং এটি তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক। তবে, এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা না থাকা এবং নিয়মিত আপডেট না জানার কারণে অনেকেই এটা গ্রহণ করতে পারে না। তাই আর যেনো মিস না হয় এর জন্য আমাদের ওয়েবসাইটি অনুসরণ করুন, ধন্যবাদ। 

Visited 3,175 times, 1 visit(s) today

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *