২০২৫ সালে বয়স্ক ভাতা আবেদন অনলাইন করার পদ্ধতি

২০২৫ সালে বয়স্ক ভাতা পেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বয়স্ক ভাতা আবেদন অনলাইন করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি খুব সহজ এবং মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনি আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন। এই আর্টিকেলটিতে আমরা ধাপে ধাপে জানাবো কিভাবে বয়স্ক ভাতা আবেদন অনলাইন করবেন। তাই আবেদন করতে চাইলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।  

বয়স্ক ভাতা কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বয়স্ক ভাতা বাংলাদেশ সরকারের একটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। এই ভাতা মূলত বয়স্ক নাগরিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, যারা নিজেরা কাজ করতে অক্ষম বা আর্থিকভাবে অসহায়। এই ভাতা পেতে হলে আবেদনকারীর বয়স ৬৫ বছর (পুরুষের ক্ষেত্রে) ৬২ বছর (মহিলাদের ক্ষেত্রে) এর বেশি হতে হবে এবং নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে।

অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদন করার যোগ্যতা 

এবার তবে জেনে নেয়া যাক বয়স্ক ভাতা অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে, বা কোন কোন শর্ত পূরণ হওয়া চাই: 

১) আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

২) বয়স সর্বনিম্ম পুরুষের ক্ষেত্রে ৬৫ ও নারীদের ক্ষেত্রে ৬২ বছর হতে হবে।

৩) কোনো সরকারি অথবা বেসরকারি পেনশন প্রাপ্তি থাকলে আবেদনকারী ভাতা পাওয়ার জন্য অযোগ্য হবেন।

৪) নিম্ন আয়ের অধিকারী হতে হবে, অর্থাৎ বছরে গড় আয় ১০ হাজার টাকার নিচে থাকতে হবে।

৫) VGD Card থাকলে বয়স্ক ভাতা আবেদন করা যাবে না।

বয়স্ক ভাতা আবেদন অনলাইন প্রস্তুতি

আবেদন করার আগে নিচের জিনিসগুলো প্রস্তুত রাখুন:


১. জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর
২. জন্ম নিবন্ধন নম্বর
৩. মোবাইল নম্বর
৪. পারিবারিক তথ্য (পিতার নাম, মাতার নাম, বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদি)
৫. ঠিকানার তথ্য (বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পোস্টকোড)

বয়স্ক ভাতা আবেদন অনলাইন করার নিয়ম ২০২৫

প্রথমে আপনাকে এমআইএস ভাতাবিডিশ অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। অনলাইন আবেদন ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো: এমআইএস ভাতাবিডিশ

ধাপ ১: কার্যক্রম নির্বাচন করুন

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর, কার্যক্রম নির্বাচন করুন অপশনে ক্লিক করুন। এখানে আপনি তিনটি অপশন দেখতে পাবেন:


১. প্রতিবন্ধী ভাতা
২. বয়স্ক ভাতা
৩. বিধবা ভাতা

যেহেতু আপনি বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করছেন, তাই বয়স্ক ভাতা অপশনে ক্লিক করুন। এবারে আপনার সামনে একটি ফর্ম আসবে। এই ফর্মে আবেদনকারীকে যাচাই করার উদ্দেশ্যে তথ্য দিতে হবে। 

এই তথ্য যাচাইয়ের পর্যায়ে আপনাকে হয়তো জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধনের নাম্বার দিতে হবে। আপনি যেটিই সিলেক্ট করেন না কেনো সেটির নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে দিবেন। 

ফর্মের নিচে আপনাকে একটি ক্যাপচা পূরণ করতে বলা হবে। যেমন, যদি লেখা থাকে ১০ + ৩, তাহলে উত্তর ১৩ লিখুন। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইকরণ অপশনে ক্লিক করুন।

আপনার NID অথবা জন্ম নিবন্ধন যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে এই পর্যায়ে NID তথ্য যাচাই সফলভাবে হয়েছে এমন একটি নোটিফিকেশন আসবে। এরপরেই আপনার মূল আবেদন ফরম ফিলআপ এর কাজ শুরু হবে। 

ধাপ ২: ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করুন

এই পর্যায়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। যার জন্য নিচের দেয়া ছবিটি লক্ষ্য করুন এবং সেখানে থাকা সকল তথ্য গুলো একেক করে দিয়ে যান। 

  • জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর
  • জন্ম তারিখ

মূলত আবেদনকারী যাচাই করার সুবাদে এগুলো অটোমেটিক ভাবে ফিলআপ হয়ে যাবে। পাশাপাশি আবেদনকারীর নামও বাংলা, ইংরেজিতে ফিলআপ হয়ে যাবে। তবে যদি কোনোটি বাদ যায় তবে দিয়ে দিবেন। এরপর আরো যে তথ্য গুলো দিতে হবে সেগুলো হলো: 

  • পিতার নাম (বাংলা এবং ইংরেজিতে)
  • মাতার নাম (বাংলা এবং ইংরেজিতে)
  • মোবাইল নম্বর
  • বৈবাহিক অবস্থা (বিবাহিত, অবিবাহিত, বিধবা ইত্যাদি)
  • ধর্ম
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা

ধাপ ৩: যোগাযোগের তথ্য 

এবার আপনি যেখানে থাকেন সেইখানের তথ্য দিতে হবে পাশাপাশি আপনার স্থায়ী ঠিকানাও সাবমিট করতে হবে। 

এক্ষেত্রে সঠিক ভাবে আপনার বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পোস্টকোড এর নাম্বার গুলো ফিলাপ করুন। বর্তমান ঠিকানা দেয়া হয়ে গেলে আপনার স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দিতে হবে। 

যদি উভয় ঠিকানাই একই হয় তবে সেখানে একটি অপশন পাবেন যেখানে টিক মার্ক করলে পুনরায় একই কাজ আর করতে হবে না। আর যদি একই না হয় তবে স্থায়ী ঠিকানার ক্ষেত্রে একই ভাবে বিভাগ থেকে শুরু করে পোস্টকোড অব্দি তথ্য দিবেন। 

ধাপ ৪: অন্যান্য তথ্য 

এবার আরো কিছু তথ্য পর্যায়ক্রমে দিয়ে যেতে হবে। সেই তথ্য গুলো হলো: 

  • বার্ষিক আয়
  • সরকারি বা বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা (পেলে উল্লেখ করুন, না পেলে “না” সিলেক্ট করুন)
  • প্রশিক্ষণ (যদি থাকে)
  • জন্মকালীন নাম (যদি পরিবর্তন হয়ে থাকে)
  • নমিনি তথ্য (যদি প্রকাশ করতে চান)
  • জমির পরিমাণ
  • ঘরের ধরণ (পাকা, আধা-পাকা, কাঁচা)
  • খাবার পানির উৎস (টিউবওয়েল, নলকূপ ইত্যাদি)
  • ল্যাট্রিনের ধরণ
  • বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে কিনা

ধাপ ৫: যোগ্যতার অন্যান্য তথ্য 

এই অংশে আপনাকে পরিবারের সদস্যদের তথ্য দিতে হবে:

  • খানায় মোট সদস্য সংখ্যা
  • খানার শিশু সংখ্যা
  • খানা প্রধানের বয়স
  • সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • পেশা

এই সেকশনের তথ্য গুলো দিলেই আবেদনের মূখ্য কাজ গুলো শেষ। 

সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর, সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। সাবমিট করার আগে একবার সব তথ্য ভালোভাবে চেক করে নিন।

আবেদন করার পর কী হবে?

আবেদন জমা দেওয়ার পর, আপনার আবেদনটি যাচাই করা হবে। যদি সবকিছু সঠিক থাকে, তাহলে আপনি নির্দিষ্ট সময়ে বয়স্ক ভাতা পেতে শুরু করবেন।

যেসকল কারণে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে 

বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু কারণ রয়েছে যা আবেদনকারীকে অযোগ্য করে তুলতে পারে। এরা বয়সে বৃদ্ধ হলেও ভাতা পাবে না, তারা হলো:

১) সরকারি বা বেসরকারি পেনশনপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

২) আবেদনকারীর নাম যদি কোন কারিগরি বা প্রশাসনিক ভুলের কারণে তালিকাভুক্ত না হয়।

৩) VGD কার্ড (দুঃস্থ মহিলাদের কার্ড) থাকলে বয়স্ক ভাতা পাবে না। 

৪) সরকারি অন্য কোনো খাত থেকে অনুদান পেলেও বয়স্ক ভাতা পাবে না। 

চুড়ান্ত মন্তব্য 

বয়স্ক ভাতা বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। এই ভাতা পেতে হলে সঠিকভাবে অনলাইনে আবেদন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অনলাইন ছাড়াও আপনি সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। 

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাকে অনলাইনে বয়স্ক ভাতা আবেদন করার নিয়ম বুঝতে সাহায্য করবে। যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে কমেন্ট করে জানান। আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পেরে খুশি হব।

Leave a Comment

x