২০২৫ সালে বিধবা ভাতা করতে কি কি লাগে? জেনে নিন বিস্তারিত

বাংলাদেশ সরকার অসহায় ও দুস্থ বিধবা মহিলাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য বিধবা ভাতা চালু করেছে। এই ভাতা পেতে হলে আবেদন করতে হয়। আগে এই আবেদন করতে হলে ইউনিয়ন পরিষদ বা সংশ্লিষ্ট অফিসে যেতে হতো, কিন্তু এখন অনলাইনে আবেদন করা যায়। আজকে আমরা জানবো, বিধবা ভাতা করতে কি কি লাগে, কিভাবে আবেদন করতে হয় এবং বিধবা ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তাবলী সম্পর্কে।

বিধবা ভাতা কি?

শুরুতেই বিধবা ভাতা সম্পর্কে ব্যাসিক কিছু তথ্য দিয়ে নেই। বিধবা ভাতা হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। এই ভাতার মূল উদ্দেশ্য হলো, যেসব মহিলারা স্বামী হারিয়েছেন এবং আর্থিকভাবে অসহায়, তাদের আর্থিক সাহায্য প্রদান করা। এই ভাতা পেলে তারা তাদের পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে পারেন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারেন।

২০২৫ সালে বিধবা ভাতা করতে কি কি লাগে?

বিধবা ভাতা একটা সময় ইউনিয়ম পরিষদের মাধ্যমে আবেদন করা গেলেও এখন অনলাইনে আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এই কাগজপত্র গুলো ছাড়া আবেদন করা সম্ভব নয়। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি

আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে। এই পরিচয়পত্রে আপনার সকল ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, বাবা-মায়ের নাম, জন্ম তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে।

  • স্বামীর মৃত্যুর সনদপত্র বা ডেথ সার্টিফিকেট

বিধবা ভাতার আবেদনকারীর স্বামীর মৃত্যুর সনদপত্র বা ডেথ সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। এই সনদপত্রে স্বামীর মৃত্যুর তারিখ এবং কারণ উল্লেখ থাকবে।

  • আবেদনকারীর দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি

আবেদনকারীর দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি জমা দিতে হবে। এই ছবিগুলো অবশ্যই সাম্প্রতিক সময়ের তোলা হতে হবে।

  • সচল মোবাইল নাম্বার

আবেদন করার সময় একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। এই নাম্বারে সরকারি কর্তৃপক্ষ আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং আবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য দিতে পারেন।

  • মোবাইল ব্যাংকিং তথ্য (বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি)

বিধবা ভাতা পেতে হলে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক। আপনি বিকাশ, নগদ বা রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করতে পারেন। এই অ্যাকাউন্টে ভাতার টাকা জমা হবে।

  • বিধবা ভাতা আবেদন ফরম

বিধবা ভাতার জন্য একটি আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এই ফরমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, পরিবারের তথ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করতে হবে।

  • অতিরিক্ত কাগজপত্র

কখনো কখনো অতিরিক্ত কাগজপত্রের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, জন্ম নিবন্ধন সনদ, বাসার কাগজপত্র ইত্যাদি। যদি অতিরিক্ত কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়, তাহলে অবশ্যই তা জমা দিতে হবে। এটা অবশ্য অফলাইন তথা, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। 

কিভাবে অনলাইনে আবেদন করতে হয়?

বিধবা ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করা খুব সহজ। নিচে ধাপে ধাপে পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:

ধাপ ১: ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন

প্রথমে আপনাকে সরকারি সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে [https://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication] প্রবেশ করতে হবে। 

ধাপ ২: ব্যক্তিগত তথ্য দিন

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। যেমন, নাম, বাবা-মায়ের নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ইত্যাদি।

ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করুন

এরপর আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো আপলোড করতে হবে। যেমন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, স্বামীর মৃত্যুর সনদপত্র, পাসপোর্ট সাইজের ছবি ইত্যাদি।

ধাপ ৪: আবেদন ফরম পূরণ করুন

সবশেষে আপনাকে বিধবা ভাতার আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এই ফরমে আপনার পরিবারের তথ্য, আর্থিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করতে হবে। 

তবে আপনি যদি অফলাইনে আবেদন করতে চান তাহলে আলাদা একটি আবেদন ফরম প্রয়োজন হবে। বিধবা ভাতা আবেদন ফরম PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন।  

ধাপ ৫: আবেদন জমা দিন

সব তথ্য এবং কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর আবেদনটি জমা দিন। আবেদন জমা দেওয়ার পর আপনি একটি কনফার্মেশন মেসেজ পাবেন। এবং এপ্রুভালের পর একটা নিদিষ্ট সময় থেকে বিধবা ভাতা পাওয়া শুরু করবেন। 

বিধবা ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তাবলী

বিধবা ভাতা পেতে হলে কিছু যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করতে হয়। নিচে এই যোগ্যতা ও শর্তাবলী আলোচনা করা হলো:

১. এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে: আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। অর্থাৎ, তার জন্ম নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে।

২. অসহায় ও দুস্থ বিধবা বা স্বামী নিগৃহিতা মহিলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে: যেসব মহিলারা অসহায় ও দুস্থ এবং যাদের স্বামী মারা গেছেন বা স্বামী দ্বারা নিগৃহিতা হয়েছেন, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

৩. ১৬ বছর বয়সের নিচে দুটি সন্তান থাকলে অগ্রাধিকার: যেসব বিধবা মহিলাদের ১৬ বছর বয়সের নিচে দুটি সন্তান রয়েছে, তারা ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।

৪. বার্ষিক গড় আয় ১২,০০০ টাকার নিচে হতে হবে: আবেদনকারীর বার্ষিক গড় আয় ১২,০০০ টাকার নিচে হতে হবে। অর্থাৎ, যারা আর্থিকভাবে অসহায়, তারাই এই ভাতা পাবেন।

৫. বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে: সর্বশেষে, আবেদনকারীকে বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে। এই কমিটি আবেদনকারীর আর্থিক অবস্থা এবং অন্যান্য শর্তাবলী যাচাই করে ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেবে।

চুড়ান্ত মন্তব্য 

বিধবা ভাতা পেলে অসহায় ও দুস্থ বিধবা মহিলারা তাদের পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে কিছুটা সাহায্য পান। আজকের এই ব্লগে আমরা বিধবা ভাতা করতে কি কি লাগে, কিভাবে আবেদন করতে হয় এবং বিধবা ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনার জন্য উপকারী হবে। যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্টটে জানাবেন। 

Leave a Comment

x