মহার্ঘ ভাতা মানে কি? পিয়ন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সবাই হবেন উপকৃত?

বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা হবে। শুধু তাই নয়, অবসরে থাকা এবং পেনশন ভোগরত কর্মকর্তারাও এই সুবিধা পাবেন। পিয়ন থেকে শুরু করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পর্যন্ত সকলেই এই ভাতা পেতে যাচ্ছেন। তাহলে চলুন, বিস্তারিতভাবে বুঝে নিই মহার্ঘ ভাতা মানে কি, এটি কেন প্রয়োজন এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব।

মহার্ঘ ভাতা মানে কি?

Dearness Allowance তথা, মহার্ঘ ভাতা হলো একটি বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যা কর্মচারীদের জীবনযাপনের ব্যয়বৃদ্ধি মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। এটি মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জীবনযাপনে সৃষ্ট চাপ সামাল দেওয়ার জন্য দেওয়া হবে। মহার্ঘ ভাতার পরিমাণ সাধারণত বেতনের নির্দিষ্ট শতাংশ হিসেবে নির্ধারিত হয় এবং এটি মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত প্রদান করা হবে।

মহার্ঘ ভাতার সুবিধা কারা পাবেন?

এই ভাতা সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পাবেন, যার মধ্যে পিয়ন থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পর্যন্ত সবাই অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও পেনশন ভোগরত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও মহার্ঘ  ভাতা পাবেন। 

মহার্ঘ ভাতার গুরুত্ব

বর্তমান সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। চাল, ডাল, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ প্রায় সব পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির ফলে কর্মচারীদের দৈনন্দিন খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায়, মহার্ঘ ভাতা একটি স্বস্তি এনে দেবে।

মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পদ্ধতি 

এখন অব্দি এই ভাতা প্রদানের স্পেসিফিক কোনো নিয়ম নির্ধারণ করা হয়মি। তবে প্রাথমিকভাবে মহার্ঘ ভাতা প্রদান দুই ধাপে হতে পারে।

১) কর্মচারীদের জন্য: তাদের বেতনের একটি অপেক্ষাকৃত বড় অংশ হিসেবে ভাতা নির্ধারিত হতে পারে।

২) কর্মকর্তাদের জন্য: তাদের ক্ষেত্রে ভাতার শতাংশ তুলনামূলক কম হতে পারে।

কীভাবে মহার্ঘ ভাতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে?

১৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোঃ মোখলেসুর রহমান ঘোষণা করেন যে, একটি মহার্ঘ ভাতা কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজউদ্দিন মিয়া। সচিব মোখলেসুর রহমান আরও বলেন, পে কমিশনের মতো বড়সড় পদক্ষেপের পরিবর্তে এই অন্তর্বর্তী মহার্গ ভাতা একটি দ্রুত সমাধান দেবে। তবে, কমিটির সুপারিশ কতটুকু কার্যকর হবে, তা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

এরপর গত ৮ই জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের দ্বিতীয় মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়ে মহার্ঘ ভাতা সম্পর্কেও আলোচনা হয়। ড. মাহমুদ স্পষ্ট করে বলেছেন যে, মহার্ঘ ভাতা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া।  অর্থাৎ, যত দ্রুত এটি কার্যকর করার কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তা সম্ভব নয়। তিনি বলেন: “মহার্ঘ ভাতা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা চলছে। এটি রাতারাতি কার্যকর করা যাবে না। 

উক্ত সভার পরেই সম্প্রতি (৯ জানুযায়ী, ২০২৫) সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা আগামী ৩০ জুনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

মহার্ঘ ভাতা কত টাকা?

মহার্ঘ ভাতার হার নির্ধারণের কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে বেতনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ বাড়তি দেওয়া হবে। বিভিন্ন গ্রেড এবং পদমর্যাদার ভিত্তিতে এই হার পরিবর্তিত হতে পারে। তবে বিশেষ করে কর্মকর্তার তুলনায় কর্মচারীর ভাতার টাকা বেশি হবে। উদাহরণস্বরূপ, কর্মচারীরা হয়তো বেতনের ১৫-২০% পর্যন্ত ভাতা পেতে পারেন, যেখানে কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এটি ১০-১৫% হতে পারে।

সাধারণ জনগণ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। বিশেষত, নিম্ন আয়ের কর্মচারীদের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা। তবে, এটি দীর্ঘমেয়াদে সরকারের আর্থিক পরিকল্পনায় কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

উপসংহার

সবশেষে উক্ত আর্টিকেলের দ্বারা মহার্ঘ ভাতা মানে কি তা নিশ্চই বুজতে পেরেছেন। মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক চাপ কমাতে সহায়ক হবে। তবে, এটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সুপরিকল্পিত নীতি গ্রহণ জরুরি। ভবিষ্যতে এই পদক্ষেপের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের সকল কর্মচারীর জন্য এই ভাতা একটি আশার আলো হয়ে উঠতে পারে, যদি এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়। মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত পরবর্তী আপডেট পেতে চোখ রাখুন এখানেই। 

Leave a Comment

x