সুবর্ণ নাগরিক কার্ডের আবেদন করার নিয়ম ও প্রক্রিয়া (বিস্তারিত)
বাংলাদেশ সরকার দ্বারা দেশের প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সুবিধা প্রদান ও ভাতা এর আওতায় নিয়ে আসার পর অনেকেই আছে যারা ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে চাচ্ছে। তবে যখন আবেদন এর প্রসেস গুলো সম্পন্ন করতে যায় তখনই বিশেষ এর কার্ডের তথ্যের প্রয়োজন হয়। আর সেই কার্ডটিই হলো সুবর্ণ নাগরিক কার্ড।
বিশেষ এই কার্ডটি প্রতিবন্ধী কার্ড বা প্রতিবন্ধী আইডেন্টিটি কার্ড নামেও পরিচিত। দেশের সকল প্রতিবন্ধীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের পৃথক পরিচয় তৈরি করা (এই কারণে যে তাদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে) এর অন্যতম উত্তম পন্থা হলো সুবর্ণ নাগরিক কার্ড। এই কার্ডের মাধ্যমে সকল ধরনের প্রতিবন্ধীরা নিজেদের হক আদায় করতে পারবে।
সুবর্ণ নাগরিক কার্ড এর মাধ্যমে অনলাইনে ভাতা এর জন্য আবেদন করার পাশাপাশি যেকোনো স্থানে এটা আইডেন্টি হিসেবে তুলে ধরা যাবে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেও এই কার্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই কার্ডটি। আর এবারের আর্টিকেলের মাধ্যমে সুবর্ণ নাগরিক কার্ড এর জন্য আবেদন করার নিয়ম, কিভাবে নিবেন আর কি কি প্রয়োজন হবে বা কিভাবে কি করতে হবে সব কিছুর খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানানো হবে।
সুবর্ণ নাগরিক কার্ড ওভারভিউ
যারা শারীরিক ভাবে স্বাভাবিক না, বা যারা বিকলঙ্গ অন্যভাষায় যাদের বলা হয় প্রতিবন্ধী তাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে বিশেষ এক পরিচয় প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করে যেখান থেকেই তাদের পরিচয় বাহক “সুবর্ণ নাগরিক কার্ড” এর ধারণাটি আসে, যাতে করে তাদের বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করণের মাধ্যমে বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করা যায়।
বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অনুদানের ক্ষেত্রে সুবর্ণ নাগরিক কার্ড এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। একজন স্বাভাবিক মানুষের যেমন জাতীয় পরিচয় পত্র রয়েছে। তেমনই একজন প্রতিবন্ধীরও সুবর্ণ নাগরিক কার্ড রয়েছে পরিচিতির জন্য।
২০০৫ সাল থেকেই সরকার বিভিন্ন ভাবে প্রতিবন্ধীদের ভাতা দিয়ে আসছিলো তবে ২০২২ সালের ১০ আগস্ট চুড়ান্ত ভাবে প্রতিবন্ধীদের পরিচয় ভিত্তিক ভাতা প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করে। এখন থেকে প্রতিবন্ধীর পরিচয় বহন, বিশেষ সুবিধা ভোগ, ও অনুদানের জন্য সুবর্ণ নাগরিক কার্ড এর প্রয়োজন হবে।
তাহলে বুজতে পারছেন এর প্রয়োজনীয়তা কতটা বেশি বর্তমান সময় সকল প্রতিবন্ধীদের জন্য। তাহলে এবার দেখে নেয়া যাক কারা পাবে এই প্রতিবন্ধী কার্ড বা সুবর্ণ নাগরিক কার্ড।
কারা সুবর্ণ নাগরিক কার্ড নিতে পারবে?
বাংলাদেশে অনেক ধরণের প্রতিবন্ধী রয়েছে। প্রধানত এই সকল প্রতিবন্ধীদের দুই ভাবে ভাগ করা যায়, ১) মানসিক প্রতিবন্ধী; ২) শারীরিক প্রতিবন্ধী।
তবে শারীরিক প্রতিবন্ধী আবার বেশ কিছু ধরণের হয় যেমন:
- দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
- বাক প্রতিবন্ধী
- শ্রবন প্রতিবন্ধী
- বহুবিধ প্রতিবন্ধী (একাধিক দিক থেকে প্রতিবন্ধী)
এই সকল ধরোনের প্রতিবন্ধীরাই সুবর্ণ নাগরিক কার্ডের আওতায় আসবে বা এই কার্ডটি পাবে। তবে যেকোনো দিক থেকে প্রতিবন্ধী হওয়াটাই এই কার্ড পাওয়ার সম্পূর্ণ অধিকারি নয়, এর জন্য আরো বেশ কিছু জিনিস প্রয়োজন যেটা সম্পর্কে পরের ধাপে জানানো হয়েছে। পড়তে থাকুন…
সুবর্ণ নাগরিক কার্ড করতে কি কি প্রয়োজন?
সুবর্ণ নাগরিক কার্ড পেতে সুবর্ণ নাগরিক কার্ড এর জন্য আবেদন একজন প্রতিবন্ধীর আরো যেসকল জিনিসের প্রয়োজন হবে সেগুলো এই পর্যায়ে লিস্ট আঁকারে জানাচ্ছি।
১) আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। |
২) প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্মনিবন্ধন কার্ড থাকতে হবে। |
৩) আবেদন কালীন সময়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তার পক্ষের অবিভাবক থাকতে হবে। |
৪) আবেদন ফরমে নিদিষ্ট স্থানে স্বাক্ষর করতে হবে। |
৫) একটি সচল মোবাইল নাম্বার (যেখানে বিকাশ / নগদ একাউন্ট আছে) |
৬) আবেদনকারীর ইমেইল এড্রেস থাকতে হবে। |
৭) মেডিক্যাল ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হবে। |
৮) সকল ডকুমেন্টস সহ সমাজসেবা অধিদপ্তরে উপস্থিত হতে হবে। |
সুবর্ণ নাগরিক কার্ড পাওয়ার নিয়ম
এই পর্যায়ে একটা ওভারল ধারণা দিবো যে, সুবর্ণ নাগরিক কার্ড এর জন্য ঠিক কি করতে হবে ও কিভাবে করতে হবে। খুব সহজ করে বলতে গেলে, সুবর্ণ নাগরিক কার্ড পাওয়ার জন্য প্রথমেই আবেদন কার্য সম্পাদান করতে হবে (কিভাবে আবেদন করবেন সে বিষয়ে পরবর্তী ধাপে বিস্তারিত আছে, পড়তে থাকুন)
আবেদন শেষ হয়ে গেলে সেটার পিডিএফ ডাউনলোড করে প্রিন্ট আউট করে নিতে হবে। সেটা নিয়ে যেতে হবে মেডিক্যাল টেস্ট এর জন্য, সেখানে আবেদনকারী ব্যক্তির পরিক্ষা করা হবে যে তার দাবীকৃত বিষয় সত্যি কি-না (প্রতিবন্ধী কি না সেটা চেক করা হবে)
সবশেষে আবেদন পত্র ও মেডিক্যাল টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে চলে যেতে হবে সমাজসেবা অধিদপ্তরে যেখানে ওভারল বিষয় গুলো যাচাই বাছাই করে SMS এর মাধ্যমে জানিয়ে দিবে সুবর্ণ নাগরিক কার্ড পাবে কি-না, আর পেলে কিভাবে নিতে হবে সে বিষয়ে। ব্যাস, এটুকুই ছিলো ওভারল কাজ।
এবার আসুন জেনে নেয়া যাক এই আর্টিকেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট (সুবর্ণ নাগরিক কার্ড আবেদন পদ্ধতি) সম্পর্কে।
সুবর্ণ নাগরিক কার্ড আবেদন পদ্ধতি
সুবর্ণ নাগরিক কার্ড আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার আগে কিছু জিনিস গুছিয়ে নিতে হবে। সেগুলো হলো:
১) আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্মনিবন্ধন
২) আবেদনকারীর পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র
৩) আবেদনকারীর স্ক্যান করা স্বাক্ষর
এই ৩টি জিনিস গুছিয়ে নিয়ে আবেদন শুরু করতে হবে। যেহেতু বর্তমানে অফিসের চক্কর লাগাতে হচ্ছে না, অনলাইনেই করা যাচ্ছে তাই চলে যেতে হবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে:
( https://www.dis.gov.bd/SurveyForm/OnlineApplication )
এর পর আপনার সামনে প্রদর্শিত হবে একটি পপআপ। সেখানে ছোট করে লিখা “অবগত হলাম” এ ক্লিক করলে আবেদন করার মূল পেজ এ চলে আসবে।
উল্লেখ্য যে, আবেদনটি সম্পন্ন করতে ৪টি পেজে তথ্য প্রদান করতে হবে। এর মধ্যে প্রথম আবেদনকারীর (প্রতিবন্ধী) সম্পর্কে ব্যাসিক তথ্য যেমন:
- নাম পরিচয়
- বর্তমান ঠিকানা
- স্থায়ী ঠিকানা
ইত্যাদির তথ্য দিতে হবে। এরপরের যে ৩টি পেজ আসবে সে পেজ গুলোতে আবেদনকারীর শারীরিক অবস্থার সম্পর্কে জানান দিতে হবে। ফরম পূরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক তথ্য প্রদান করবেন কেননা, এগুলো পরবর্তীতে ভেরিফাই করে সুবর্ণ নাগরিক কার্ড প্রদান করা হবে।
৪টি পেজে সকল তথ্য দেয়া হয়ে গেলে সেটা সাবমিট করে প্রিন্ট আউট বের করে নিন। ব্যাস, সুবর্ণ নাগরিক কার্ড আবেদন সংক্রান্ত সকল কাজ শেষ।
পরিশেষে মন্তব্য
বাংলাদেশে বসবাসরত সকল প্রতিবন্ধীদের বিশেষ এই সুবিধাটুকু তাদের সকলের হক। যারা এর হকদার তাদের অবশ্যই উচিৎ সুবিধা গ্রহণ করা। কেননা, এই সুবিধা তাদের একক পরিচয় বহন করবে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের আর্থিক কিংবা অন্যান্য সুবিধা গ্রহনের ক্ষেত্রে সুবর্ণ নাগরিক এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ভাতা এর জন্য আবেদন করার জন্য সুবর্ণ নাগরিক কার্ডের প্রয়োজন হবে।
আশা করি উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে সুবর্ণ নাগরিক কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ভাই বোনদের যেকোনো সুযোগ সুবিধার তথ্যের জন্য আমাদের ওয়েবসাইটি অনুসরণ করতে পারেন কেননা, এখানে সকল প্রতিবন্ধীদের হক আদায়ের ব্যাপারে জানানো হয়।