১০ টাকা কেজি চালের অনলাইন আবেদন করার নিয়ম 

বাংলাদেশ সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য “খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি” চালু করেছে, এই কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র পরিবারগুলো প্রতিমাসে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল পেয়ে থাকে। কর্মসূচির লক্ষ্য, দেশের দরিদ্র জনগণ যাতে সহজে এবং স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে। ২০১৬ সাল থেকে চালু হওয়া এই কর্মসূচি লাখ লাখ দরিদ্র পরিবারের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং অর্থনৈতিক চাপ কমিয়েছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুবিধাভোগী নির্বাচনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখানে ১০ টাকা কেজি চালের আবেদন প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হলো।

১০ টাকা কেজি চালের কর্মসূচির পটভূমি ও প্রেক্ষাপট

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ২০১৬ সালে চালু হয় এবং এর লক্ষ্য ছিল পল্লী এলাকার ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া। এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয় মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে, যা কর্মভাবকালীন (Lean Period) সময়ে গরীব পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

২০১৭ সালে সরকার সুবিধাভোগীদের তালিকা ডিজিটাল করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে, এবং অনিয়ম রোধে ভুয়া সুবিধাভোগীদের কার্ড বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়। ২০২২ সালে কার্ডধারীর সংখ্যা দ্বিগুণ করে ১ কোটিতে উন্নীত করা হয় এবং নতুন ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ শুরু করা হয়। এক নজরে এই বিষয়ক সকল তথ্য: 

  • কর্মসূচির আওতায়: মাসে ৩০ কেজি চাল ১০ টাকা কেজি দরে।
  • সুবিধাভোগীর সংখ্যা: প্রায় ১ কোটি পরিবার (২০২২ সালে আপডেট অনুযায়ী)।
  • বিতরণ মাস: মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর।
  • ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল): প্রতিটি ডিলার ১ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করতে পারেন এবং একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল কেনার অনুমতি দেয়া হয়। 

১০ টাকা কেজি চালের অনলাইন আবেদন করার নিয়ম

নিম্ন আয়ের মানুষ এবং যারা এখনও এই কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছেন না, তারা এখন অনলাইনে সহজে আবেদন করতে পারবেন। অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ এবং এর মাধ্যমে দ্রুত সুবিধাভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া যায়। আবেদন প্রক্রিয়াটি চলবে ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে ৩০ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত।

১০ টাকা কেজি চালের অনলাইন আবেদন করার ধাপগুলো:

১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ: www.food.gov.bd এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করুন অপশনে ক্লিক করতে হবে। 

২. আবেদন ফর্ম পূরণ: একটি নতুন পেজে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রদান করতে হবে। 

৩. তথ্য যাচাই: প্রদত্ত তথ্যগুলো পুনরায় যাচাই করার পর সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে। সরকার আগের চেয়ে আরও কঠোরভাবে যাচাই প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে, যাতে অনিয়ম রোধ করা যায়। প্রকৃত দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের চিহ্নিত করতে জেলা প্রশাসকেরা নতুন তালিকা তৈরি করছেন। যাচাইকৃত সুবিধাভোগীদের জন্য ডিজিটাল কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে, যা এসএমএসের মাধ্যমে চাল বিতরণের তারিখ ও স্থান সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করে।

এই কর্মসূচির আওতায় আবেদন শুরু হবে ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে এবং শেষ হবে ৩০ জুন, ২০২৫-এ। যত দ্রুত সম্ভব আবেদন করুন, যাতে পরিবারের খাদ্য চাহিদা স্বল্পমূল্যে পূরণ করতে পারেন। অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত হওয়ায় আপনি বাসায় বসেই এই আবেদন করতে পারবেন।

যদিও এখন অব্দি আবেদন প্রক্রিয়া চালু হয়নি, যখন হবে তখন আমাদের ওয়েবসাইট থেকেই বিস্তারিত টিউটরিয়াল প্রদান করা হবে, তাই আমাদের ওয়েবসাইট অনুসরণ করুন। 

১০ টাকা কেজি চালের কর্মসূচির ইতিহাস 

২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে শুরু হওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, প্রথম থেকেই দরিদ্র পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রথম দিকে পল্লী অঞ্চলে কর্মভাবকালীন পাঁচটি মাস – মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, এবং নভেম্বর – এ কার্যক্রম চালানো হয়। এ কর্মসূচির মাধ্যমে বছরে প্রায় ৭.৫ লাখ মেট্রিক টন চাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিতরণ করা হয়।

এই কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি পরিবারের জন্য প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল বিতরণ করা হয়। এটি দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের নেওয়া অন্যতম বড় উদ্যোগ। এই কর্মসূচি দরিদ্র পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে আসছে।

কীভাবে সরকার এই কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করছে?

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সরকার কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের মধ্যে সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ ওঠায় তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভুয়া সুবিধাভোগী শনাক্তকরণ, কার্ড বাতিল, এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে ডিজিটাল কার্ড প্রদান করা হয়েছে। অনিয়মে যুক্ত ডিলারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা এবং বিশেষ সতর্কতা

খাদ্য মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্ত কর্মকর্তারা খাদ্য বিতরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছেন। মহামারির সময়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমজীবী ও কর্মহীন মানুষের মধ্যে চাল বিতরণ চালিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিশেষ স্বাস্থ্য বীমার আওতায় তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে তারা স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এছাড়া, খাদ্যমন্ত্রী সকল কর্মকর্তাকে দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং যদি কেউ অনিয়মে যুক্ত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

চুড়ান্ত মন্তব্য 

১০ টাকা কেজি চালের কর্মসূচি বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা। অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় দরিদ্র পরিবারগুলো আরও সহজে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুধু খাদ্য চাহিদাই পূরণ করছে না, বরং এটি দরিদ্র জনগণের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। আশা করছি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি চালের অনলাইন আবেদন করার নিয়ম জানতে পেরেছেন, যদিও এখন অব্দি (নভেম্বর, ২০২৪) অনলাইন আবেদন শুরু হয়নি, তবে শিগ্রই যখন হবে তখন আমাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে, ততক্ষন অব্দি সঙ্গেই থাকুন। 

Visited 518 times, 6 visit(s) today

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *