৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন (২০২৫-২৬ অর্থছর) 

ভিডাব্লিউবি এর কার্যক্রম সম্পর্কে না শুনলেও ৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন এর ব্যাপারে নিশ্চই শুনেছেন। প্রতিমাসে ১৫ থে কে ২৫ তারিখের মধ্যে খাদ্য বিরতণ পরিচালনা করা হয়। প্রায় প্রতিবছরই ভিডাব্লিউবি কর্তৃক ৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন গ্রহণ কর্মসূচি গ্রহণ, যাচাই বাছাই ও চাল বিতরণ করা হয়।

গত বছরের ন্যায় পুনরায় ৩০ কেজি চাল এর কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে। আজকের আর্টিকেলে এই বিষয়ে পুরো ডিটেইলস তথ্য থাকবে। আবেদন থেকে শুরু করে বিতরণ কর্মসূচির সব কিছু কভার করা হবে এই আর্টিকেলে।  

ভিডাব্লিউবি আওতায় ৩০ কেজি চাল বিরতণ কার্যক্রম 

বাংলাদেশ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় “ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট” (ভিডব্লিউবি) কার্যক্রম মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়ন করা হয়। 

কার্যক্রমের আওতায় নির্বাচিত উপকারভোগী পরিবারের মাঝে “স্বনির্ভরতার জন্য সহায়তা” এ মুলনীতি অনুসরণ করে অরি দরিদ্র নারীদেরকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার আলোকে স্থায়ীভাবে  জীবনমানের উন্নয়ন, সঞ্চয়, জীবনের নিরাপত্তা এবং  স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনা ও সক্ষমতা তৈরিতে ভূমিকা পালন করে। 

বর্তমানে চলমান ভিডাব্লিউবি চক্র ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ শেষ হবে। এবং পরবর্তী ধাপের কার্যক্রম ২০২৫-২০২৬ চক্রে ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে শুরু হবে।

এই বিষয়ে আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে মাইকিং, পোষ্টার, লিফলেট, ভিডিও, ক্লিপস, টিভিসি ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালানো হবে। উক্ত আয়জনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে সকল কর্মী, ক্লাব, সংগঠন সম্ভব্য উপকারভোগী নারীদের আবেদন প্রণালী সম্পর্কে অবগত করবেন। 

৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া 

চলমান ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত উপকারভোগী অগ্রাধিকার পাবে। ৩০ কেজি চাল এর কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া জানুযায়ী মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু হবে। এরপর বিভাগীয় সার্কেল পর্যায়ে আঞ্চলিক পরিষদ সভায় প্রস্তাবনা নির্বাচন ও বাছাইয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। সবশেষে আবেদনকারীদের প্রকৃত অবস্থা সরেজমিনে যাচাইপূর্বক নাম্বার/মান (Weightage) এর ভিত্তিতে তালিকা প্রকাশ আপডেট করা হবে।

৩০ কেজি চালের কার্ডের জন্য যোগ্যতা 

মাসে ৩০ কেজি চালের কার্ডের জন্য অবশ্যিক কিছু যোগ্যতা প্রয়োজন হবে। সেগুলো হলো: 

  • শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ, মাতৃত্বকালীন ও মানবিকতার দৃষ্টিতে কর্মক্ষম নারী; 
  • বয়স ২০ থেকে ৫০ এর মধ্যে হতে হবে;
  • জাতীয় পরিচয় পত্র অবশ্যই থাকতে হবে;
  • পরিবার চালানোর মত কোনো সদস্য নেই/ নিয়মিত আয়ের উৎস নেই এমন; 

পাশাপাশি ৩০ কেজি চালের কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া যাবে নিচে উল্লেখ্যিত যোগ্যতা গুলো থেকে থাকলে। 

১) প্রকৃত দরিদ্র ভূমিহীন পরিবার: যাদের খাবার বা পরিবারের সেবার জন্য জমি নেই অথবা নিচে উল্লেখিত সম্পত্তির সত্ত্বাধিকার ও চাহিদামাত্র মোট জমির পরিমাণ ০.১৫ একর (১৫ শতাংশ) কিংবা এর কম।

২) অসচ্ছল, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী। 

৩) যারা ঝাড়ুদার, কৃষি শ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক, কামার, মুচি, ধোপা, নাপিত, ঝাড়ুদার, কুলি, কুলি, চর্ম শিল্প ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিত পরিবার।

৪) পরিবারের নিজস্ব শৌচাগার না থাকা

৫) পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে

৬) পরিবারের নিজস্ব টিউবওয়েল বা নিরাপদ পানির উৎস না থাকলে 

৭) মাটি/টিন/বাশ দিয়ে তৈরি ঘরের দেয়াল হলে

৮) যে পরিবারে ১৫-১৮ বছরের অবিবাহিত মেয়ে থাকলে 

৯) পরিবারে অটিজম কিংবা প্রতিবন্ধী সদস্য থাকলে 

১০) এসিড সার্ভাইবার নারী থেকে থাকলে…

৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন ও প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার বেশি পাবে। তবে এর পাশাপাশি এটাও জানা উচিৎ যে কিরূপ হলে অগ্রাধিকার পাবে না। সেগুলো হলো:

বয়স ২০ এর নিচে কিংবা ৫০ এর অধিক হলে এই কার্ডের আবেদন করতে পারবে না। সরকারের চলমান অন্য কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হতে সুবিধা ভোগ করলে এই কার্ডের আবেদন করতে পারবে না। তাছাড়া পূর্বের বছর গুলোতে কার্ড ছিলো এবং চাল পেয়েছে এমন কেউ আবেদন করতে পারবে না। 

৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন এর শর্তাবলী 

৩০ কেজি চাল এর কার্ডের আবেদন এর ক্ষেত্রে কিছু শর্তাবলী রয়েছে যেগুলো মেনে চলতে হবে। প্রথমেই শর্ত এই যে, একটি পরিবার থেকে কেমন একটিমাত্র কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবে এবং একটি পরিবার মাত্র ১টি কার্ডই পাবে। 

নির্বাচিত উপকারভোগী কোনো শর্ত ছাড়াই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ৩০ কেজি চালের কার্ড পাবে। এক্ষেত্রে যদি কেউ টাকার দাবী করে তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জানানোর পরামর্শ রইলো। 

৩০ কেজি চালের কার্ড আবেদন যোগ্যতা রয়েছে, এবং কার্ড পাওয়ার উপযোগী তবে স্থানীয় বাসিন্দা না হলেও আবেদন করতে পারবে এবং কার্ড পাওয়ার সুযোগ থাকবে।  

অনলাইনে ৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন করার নিয়ম 

৩০ কেজি চাল এর কার্ডের জন্য আবেদন যোগ্যতা ও শর্তাবলি জানার পর যোগ্য ব্যক্তিরা অনলাইনে আবেদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো: 

৩০ কেজি চালের কার্ড বিরতণ কার্যক্রম হতে সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদনকারী নারীকে সংশ্লিষ্ট উপকারভোগী এলাকার আওতাভুক্ত আবেদনের মাধ্যমে করতে হবে। আবেদনকারী dwa.vwb.gov.bd এবং mygov.bd অথবা “VWB” মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবে। 

তবে, যাঁরাই মোবাইলের মাধ্যমে আবেদন করবেন তাঁদের ক্ষেত্রে এলাকায় নোটিফাই করা হবে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মহিলারা স্ব-সাক্ষরিতে নিবন্ধিত কাগজপত্র সংযুক্ত করবেন। এবং স্বশরীরে উপস্থিত থেকে আবেদন করতে হবে। 

পার্বত্য অঞ্চল অথবা যেসকল স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই সেখানে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অফলাইনেও আবেদন করতে পারবে। ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে ৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন করার পদ্ধতি ধাপে ধাপে জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

টোল ফ্রি হটলাইন ৩৩৩ নাম্বারে কল করেও আবেদন করা যাবে। সকল ইউনিয় ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাগন অ্যাপের মাধ্যমে অফলাইনেও আবেদন করার সুযোগ পাবে। তাছাড়া জাতীয় মহিলা সংস্থার “তথ্য আপা” মাঠপর্যায়ে জনবলের মাধ্যমে আবেদন করে থাকবে। 

বিঃদ্রঃ একটি এলাকায় নির্ধারিত কার্ড সংখ্যার ২ গুন সংখ্যক আবেদন গ্রহণ করা হবে। কাজেই আবেদন করা হওয়া মানেই কার্ড পেয়ে যাওয়া এমনটা নয়। আবেদন করার পর সংশ্লিষ্ট লোকেরা সরেজমিনে বিষয়টি ঘাটিয়ে দেখবে, সত্যতা প্রমাণ স্বরূপেই পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হবে এবং আবেদন গ্রহণ ও কার্ড বিতরণ করা হবে।

৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন ফরম 

অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইন প্রসেসের মাধ্যমেই আবেদন ফরম পূরণ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পৃথক করে আবেদন পত্রের প্রয়োজন হয় না, তবে আবেদন সম্পন্ন হওয়ার পর যে ফাইলটি পিডিএফ আঁকারে ডাউলোড কিংবা প্রিন্ট আউট করা হয় সেটিই আবেদন ফরম হিসেবে বিবেচিত। 

অন্যদিকে, অফলাইনে বা সরাসরি আবেদনের ক্ষেত্রে ৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন ফরমের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে নিম্মে প্রদর্শীত ফরমটিই হলো ৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন ফরম। 

৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন ফরম পিডিএফ ডাউনলোড লিংক: এখানে ক্লিক করুন

৩০ কেজি চাল বিতরণ সময়সূচি 

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রতিমাসের ১৫ হতে ২৫ তারিখের মধ্যে ওয়ার্ড ভিত্তিক খাদ্য (৩০ কেজি চাল বিতরণ কর্মসূচি) বিতরণের জন্য নিম্মে ছকে উল্লেখ্যিত সময় অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবে। 

ওয়ার্ড নংসময়তারিখ
১, ২, ৩সকাল ৮:৩০ থেকে ১১:০০টাপ্রতি মাসের ১৫ থেকে ২৫ তারিখ
৪, ৫, ৬সকাল ১১:০০ থেকে দুপুর ১:৩০টাপ্রতি মাসের ১৫ থেকে ২৫ তারিখ 
৭, ৮, ৯বিকাল ২:৩০ থেকে ৫:০০টাপ্রতি মাসের ১৫ থেকে ২৫ তারিখ

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা/প্রোগ্রাম অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে, তবে কোনো অবস্থাতেই ট্যাগ অফিসারের ব্যাতীত বিতরণ করা যাবে না। যদি ট্যাগ অফিসার বিনাকারণে অনুপস্থিত থাকে কিংবা অনিয়মিত হয় তবে আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

চুড়ান্ত মন্তব্য 

আশা করছি ৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন সংক্রান্ত সকল বিষয় জানাতে সক্ষম হয়েছি। প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরও ৩০ কেজি চালের কার্ডের আবেদন কার্যক্রম ও চাল বিরতণ কার্যক্রম পরিচালনা হবে। উক্ত কর্মসূচিটি প্রকৃতঅর্থেই প্রশংসিত এবং যোগ্য ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই উক্ত কার্যক্রম সঠিক ভাবে পরিচালনা হোক এটাই কাম্য। 

Visited 5,847 times, 1 visit(s) today

Similar Posts

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *