প্রতিবন্ধী কাকে বলে প্রতিবন্ধী কত প্রকার

প্রিয় পাঠক প্রতিবন্ধী বিডি ডট কম এর পক্ষ একরাশ ভালবাসা গ্রহণ করবেন, আজ প্রতিবন্ধী কাকে বলে প্রতিবন্ধী কত প্রকার সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা প্রতিবন্ধীতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখেন না, ফলে কে প্রতিবন্ধী আর কে প্রতিবন্ধী না তা সঠিক ভাবে নিন্বয় করতে পারেন না। শুধুমাত্র তারাই তো নয় প্রতিবন্ধী এমন অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন যাদের প্রতিবন্ধীতা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা না থাকার ফলে নিজেদের অধিকার এবং অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। বাংলাদেশ সরকারের মতে দেশে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা ৪৬ লাখ এই বিরাট জনগোষ্ঠীর সবাই কিন্তু একই রকম প্রতিবন্ধী নয়, এদের মাঝে আছে বৈচিত্র, কেউবা হলকা প্রতিবন্ধী, কেউ মাঝারি আবার কেউবা তীব্র প্রতিবন্ধী। প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্টে প্রতিবন্ধীতার ধরণ, প্রকারভেদ এবং প্রতিবন্ধীতার সংগা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

প্রতিবন্ধী কাকে বলে প্রতিবন্ধী কত প্রকার প্রতিবন্ধীতার সংজ্ঞা

বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ অনুযায়ি প্রতিবন্ধীতার সংজ্ঞা হল “(ক) জন্মগতভাবে, বা রোগাক্রান্ত হইয়া, বা দুর্ঘটনায় আহত হইয়া, বা অপচিকিৎসায়, বা অন্য কোন কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানষিকভাবে ভারসাম্যহীন; এবং (খ) উক্তরূপ বৈকল্য বা ভারসাম্যহীনতার ফলে- (অ) স্থায়ীভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন; এবং (আ) স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম৷ (২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত সংজ্ঞার আওতায় নিম্নবর্ণিত যে কোন প্রতিবন্ধীও অন্তরর্ভুক্ত– (ক) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, অর্থাত যাহার- (অ) এক চোখের দৃষ্টি শক্তি নাই; বা (আ) উভয় চোখের দৃষ্টি শক্তি নাই; বা (ই) ভিজুয়েল এ্যকুইটি, যথাযথ লেন্স ব্যবহার করা সত্তেও, ৬/৬০ অথবা ২০/২০০ (লেন্সের পদ্ধতি) অতিক্রম করে না; বা (ঈ) দৃষ্টিসীমা (field of vision) ২০ ডিগ্রী কোণের বিপ্রজতীপ কোণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে; (খ) শারীরিক প্রতিবন্ধী, অর্থাত যাহার- (অ) একটি বা উভয় হাত নাই; বা (আ) কোন হাত পূর্ণ বা আংশিকভাবে অবশ বা স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা এইরূপ দুর্বল যে, উপ-ধারা (১) এর (ক) ও (খ) দফায় বর্ণিত অবস্থা তাহার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; বা (ই) একটি বা উভয় পা নাই; বা (ঈ) কোন পা পূর্ণ বা আংশিকভাবে অবশ বা স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা এইরূপ দুর্বল যে, উপ-ধারা (১) এর (ক) ও (খ) দফায় বর্ণিত অবস্থা তাহার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; বা

(উ) শারীরিক গঠন বিকৃত বা অস্বাভাবিক; বা (ঊ) স্নায়ুবিক বৈকল্যের কারণে স্থায়ীভাবে শারীরিক ভারসাম্য নাই; (গ) শ্রবণ প্রতিবন্ধী, অর্থাত যাহার অপেক্ষাকৃত সুস্থ কানের শ্রবণ ক্ষমতা, সাধারণ কথোপকথন শ্রবণের ক্ষেত্রে, ৪০ ডেসিবল (ধ্বনির একক) বা ততধিক মাত্রায় নষ্ট, ক্ষতিগ্রস্থ বা অকার্যকর; (ঘ) বাক প্রতিবন্ধী, অর্থাত যাহার স্বাভাবিক অর্থবোধক ধ্বনি উচ্চারণ করার ক্ষমতা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বিনষ্ট বা অকার্যকর; (ঙ) মানসিক প্রতিবন্ধী, অর্থাত যাহার- (অ) বয়ঃবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক বুদ্ধির পূর্ণতা ঘটে নাই বা যাহার বুদ্ধাংক স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা কম; বা (আ) মানসিক ভারসাম্য নাই বা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নষ্ট হইয়াছে; (চ) বহু মাত্রিক প্রতিবন্ধী, অর্থাত যাহার উপরি-উল্লিখিত একাধিক প্রতিবন্ধিতা রহিয়াছে; (ছ) সমন্বয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত অন্য কোন প্রতিবন্ধী।”

প্রিয় পাঠক উপরক্ত সংজ্ঞা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম প্রতিবন্ধীতা ৭ প্রকার যথা ১, শারীরিক প্রতিবন্ধী, ২, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, ৩, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, ৪, শ্রবণ প্রতিবন্ধী, ৫, বাক প্রতিবন্ধী, ৬, সেলিব্রাল পালসি, ৭, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী।উপরের আলোচনা থেকে আমরা এটা বুঝতে পারছি যে সকল ব্যক্তির শারীরিক ত্রুটি আছে তাদের প্রতিবন্ধী কিংবা বিশেষ চাহিদা সম্পুর্ণ ব্যক্তি বলে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী কাকে বলে

যে ব্যক্তির একটি হাত নেই, একটি পা নেই কিংবা হাত পা কোনটাই নেই, অথবা হাত পা আছে কিন্তু তাতে পর্যাপ্ত শক্তি নেই এমন ব্যক্তিদের শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে।

মানসিক প্রতিবন্ধী কাকে বলে

যে সকল ব্যক্তি আর দশজন সাধারন মানুষের মত আচারণ করতে পারে না, নিজে নিজে কথা বলে, বিনা কারণে হাসে ও কাদে, নিজেকে পরিপাটি রাখতে পারে না এমন ব্যক্তিদের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বলে।

বাক প্রতিবন্ধী কাকে বলে

যে ব্যক্তি কথা বলতে পারে না কিংবা অস্পষ্ট ভাবে কথা বলে, কথা বোঝা যায় না এমন ব্যক্তিদের বাক প্রতিবন্ধী বলে।

শ্রবণ প্রতিবন্ধী কাকে বলে

যে সকল ব্যক্তিগণ কানে শুনতে পায় না কিংবা খুবই কম শুনতে পায়, সেটা এতটাই কম যাতে তার দৈন্দন্দিন জীবনযাপন ব্যহত হয় এমন ব্যক্তিদের শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কাকে বলে

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হল সে সকল ব্যক্তি যারা দু চোখে কিংবা এক চোখে কিছুই দেখতে পায় না, কিংবা অল্প দেখে, চশমা ব্যবহার করেও যাদের দৃষ্টিশীমা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয় তারাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।

মহুমুখি প্রতিবন্ধী কাকে বলে

বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী হল সে সকল ব্যক্তি যাদের শরীরে একাধিক প্রতিবন্ধীতার ধরণ বিদ্যমান। যেমন মনে করা যাক জমিস সাহেবের একটি হাত নেই এবং তিনি কথাও বলতে পারেন না, প্রতিবন্ধীতার এই দুইটি ধরণ বিদ্যমান থাকার ফলে জসিম সাহেব বহুমুখি প্রতিবন্ধী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

প্রিয় পাঠক এই ছিল প্রতিবন্ধীতার ধরণ বা প্রতিবন্ধীতা কি সে সম্পর্কে আমাদের আলোচনা। আজকের এই লেখাটি পড়ে আপনার কেমন লাগল তা অবশ্যই মন্তব্য করে জানাবেন। আপনারা আর কি বিষয়ে জানতে চান তাও কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন এবং পরিমাণ মত পানি ব্যবহার করবেন, প্রয়োজনের বেশি পানি ব্যবহার পানি অপচয়ের সামিল। লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Leave a Comment