বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার ভাতা প্রদান করে। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তার ভাতা কে পাবে এবং পুরো প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয় এসব বিষয়ে অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি থাকে। এই আর্টিকেলে মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারিশদের ভাতা পাওয়ার নিয়ম এবং প্রক্রিয়া সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তার ভাতা কে পাবে?
একজন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা প্রধানত ভাতা পাওয়ার যোগ্য। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার ভাই-বোনও এই ভাতা পেতে পারেন। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
#১. স্ত্রী ভাতা পাবে যে নিয়মে
যদি মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী জীবিত থাকেন, তাহলে মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী পুরো ভাতা পাবেন। তবে বহুবিবাহের ক্ষেত্রে, যদি মুক্তিযোদ্ধার একাধিক স্ত্রী থাকেন, তবে তারা সমান ভাগে ভাতা পাবেন।
উদাহরণস্বরূপ, একজন মুক্তিযোদ্ধা মাসে ২০,০০০ টাকা ভাতা পেতেন। তাঁর যদি দুই স্ত্রী থাকেন, তবে মৃত্যুর পর প্রত্যেকে সমানভাবে ১০,০০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। এবং স্ত্রী মারা গেলে তাঁর সন্তানরা সমানভাবে ভাতা পাবেন।
#২. সন্তানদের ভাতা পাবে যে নিয়মে
যেমনটা কিছুক্ষন আগে বলা হলো। মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী না থাকলে সন্তানরা সমান ভাগে ভাতা পাবেন। উদাহরণস্বরূপ: যদি মুক্তিযোদ্ধার চার সন্তান থাকেন এবং তাঁর মাসিক ভাতা ২০,০০০ টাকা হয়, তবে প্রত্যেকে ৫,০০০ টাকা করে পাবেন।
তবে একাধিক স্ত্রী থাকার ক্ষেত্রে পক্ষভেদে সন্তানদের ভাগ করার বিষয়ে সমাধান হলো: যদি মুক্তিযোদ্ধার দুই স্ত্রী থেকে এক পক্ষের একটি সন্তান এবং অপর পক্ষের তিনটি সন্তান থাকে, তাহলে সাধারণত চার সন্তানই সমান ভাগে টাকা পাবেন। তবে এতে মাঝেমধ্যে কিছু অনিয়ম দেখা দিতে পারে।
#৩. ভাই-বোনরা ভাতা পাবে যে নিয়মে
যদি মুক্তিযোদ্ধার কোনো সন্তান বা স্ত্রী না থাকেন, তবে তাঁর ভাই-বোনেরা ভাতা পাবেন। এ ক্ষেত্রে ভাতা সমানভাবে ভাগ করা হয়। ভাই বা বোন কেন্দ্রিক কোনো কম বেশি হয় না।
ভাতা পেতে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন
মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পরে ওয়ারিশদের ভাতা পেতে হলে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এগুলো হলো:
- ওয়ারিশ সনদপত্র: মুক্তিযোদ্ধার বৈধ ওয়ারিশ হিসেবে পরিচয়পত্র।
- মৃত্যুসনদ: মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর প্রমাণস্বরূপ একটি সনদপত্র।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): ভাতা প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস: যেখানে ভাতা জমা হবে।
- প্রয়োজনীয় ফরম পূরণ: মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্ধারিত ফরম।
মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর ভাতা গ্রহনের প্রক্রিয়া
মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে ওয়ারিশদের প্রথমে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। অফিস সহকারী বা কমান্ডারের কাছে গিয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে। তাঁদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে।
ওয়ারিশদের নিজেদের নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এই অ্যাকাউন্টেই ভাতা জমা হবে। ব্যাংক আবেদন গ্রহণের পর কাগজপত্র যাচাই করে ঢাকায় পাঠাবে।
প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত ১ থেকে ২ মাস সময় লাগে। উদাহরণস্বরূপ: যদি একজন মুক্তিযোদ্ধা নভেম্বর মাসে মারা যান, তবে তাঁর ওয়ারিশগণ সাধারণত ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসে ভাতা পেতে শুরু করবেন।
মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পরের মাস থেকে ভাতা কার্যকর হতে একটু সময় লাগলেও, এই সময়ের ভাতা পরবর্তী মাসে বকেয়া হিসেবে প্রদান করা হয়।
প্রক্রিয়ার সময়সীমা এবং চ্যালেঞ্জ
ভাতা পেতে যতটা সহজ মনে হয়, প্রক্রিয়াটি বাস্তবে ততটাই জটিল। বেশ কয়েকটি ধাপে কাগজপত্র যাচাই হয় এবং সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর কাগজপত্র যাচাই করে নিশ্চিত হয় যে আবেদনকারী বৈধ ওয়ারিশ। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধার এলাকার স্থানীয় দপ্তরে আবেদনটি যাচাই করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
মুক্তিযোদ্ধার ওয়ারিশদের মধ্যে ভাতা ভাগ নিয়ে মাঝেমধ্যে বিরোধ দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মেনে আবেদন করা উচিত। কোনো ধরনের অসুবিধা হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাহায্য নেওয়া উচিত। তাছাড়া প্রতিবারই ভাতা বিতরণের সময় সঠিক ওয়ারিশের কাছে অর্থ পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
চুড়ান্ত মন্তব্য
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা তাঁদের পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ব্যবস্থা। তবে এই ভাতা পেতে সঠিক নিয়ম মেনে আবেদন করা প্রয়োজন। স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ অফিস এবং ব্যাংকের সহায়তায় এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। যদি আপনি বা আপনার পরিবার এই প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হন, তাহলে স্থানীয় দপ্তরে যোগাযোগ করুন।
সঠিক তথ্য এবং নিয়ম অনুসরণ করলেই আপনার প্রাপ্য ভাতা পাওয়া সহজ হবে। আপনার যদি এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন। আশা করি, আর্টিকেলে থাকা “মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তার ভাতা কে পাবে?” বিষয়ক তথ্যটি আপনার জন্য সহায়ক হবে।
প্রতিবন্ধী বিডি একটি সেবামূলক ওয়েবসাইট যেখানে বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী শ্রেনীর নাগরিকদের প্রদানকৃত ভাতা ও অন্যান্য সেবা সমূহ নিয়ে তথ্য প্রদান করে থাকে। এছাড়াও সরকার দ্বারা প্রদানকৃত অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ সুবিধা নিয়েও জানানো হয়ে থাকে। তবে এটা কোনো সরকারি ওয়েবসাইট নয়।