৪৩ শতাংশ ভাতাভোগী ভাতা পাওয়ার যোগ্য নয় || জানালেন সমাজসেবা অধিদপ্তর 

এতোদিন যারাই ভাতা পেয়ে আসছিললো তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ ভাতাভোগী ভাতা পাওয়ার যোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বিভিন্ন ধরনের ভাতা; যেমন বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতা। 

এই ভাতা সাধারণত দেশের দরিদ্র জনগণের জন্য প্রণোদনা বা সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়। তবে সম্প্রতি সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, যে তালিকায় এই ভাতা প্রদান করা হয়, তার প্রায় ৪৩ শতাংশই ত্রুটিপূর্ণ এবং তা সংশোধন করা দরকার। এই পরিস্থিতি দেশের বৃহৎ অংশের দরিদ্র জনগণের জন্য একটি বড় সংকট তৈরি করেছে, যাদের প্রকৃতপক্ষে এই ভাতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে, তারা সঠিকভাবে তা পাচ্ছেন না।

সমাজকল্যাণ ভাতা: প্রয়োজন সঠিক সিস্টেমের 

সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা জানান, বয়স্ক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানকারী তালিকার প্রায় ৪৩ শতাংশই ভুল বা ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ, এমন অনেক মানুষ যারা এই ভাতার সুবিধা পাওয়ার জন্য যোগ্য নয়, তারাও এভভাতার আওতায় আসছেন। এর ফলে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা যাতে তাদের প্রাপ্য সুবিধা পান, তা নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না।

তিনি আরও বলেন, “তালিকা সংশোধনের পরই ভাতা প্রদান প্রক্রিয়া পুনরায় পুরোদমে চালু হবে।” এর মানে হলো, এই ভাতার সুবিধাভোগী তালিকায় যে ত্রুটিগুলি রয়েছে, সেগুলো ঠিক করা না গেলে কোনভাবেই সঠিকভাবে দরিদ্র জনগণের মধ্যে এই ভাতা বিতরণ করা সম্ভব নয়।

ভাতাভোগী তালিকা সংশোধনের পদক্ষেপ 

ভাতা বিতরণের সঠিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে প্রয়োজন একটি পরিস্কার এবং সঠিক তালিকা। সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, 

“যতটা জরুরি ভাতা প্রদান করা, তার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি হলো এই ভাতার সুবিধাভোগী তালিকা সঠিক করা।” 

সরকার ইতিমধ্যেই এই তালিকা সংশোধন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং দ্রুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তালিকায় যে অসঙ্গতিপূর্ণ বা ভুল তথ্য আছে, সেগুলি সঠিক করা হলে, অনেক গরীব এবং অসহায় মানুষ সহজেই তাদের প্রাপ্য সুবিধা পাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র ভাতা প্রদান করা নয়, বরং সঠিকভাবে যারা ভাতা পাওয়ার যোগ্য তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং এটির যথাযথ বিতরণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য একটি শক্তিশালী সিস্টেম প্রয়োজন, যাতে ভাতা সঠিকভাবে উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে পৌঁছায়।

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের পদক্ষেপ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ১ কোটি ২০ লাখ দরিদ্র মানুষ ভাতা পাচ্ছিল। তবে, তালিকায় ভুল তথ্য থাকায় এই কর্মসূচি যথাযথভাবে কার্যকরী হতে পারেনি। সুতরাং, সরকারের পক্ষ থেকে এসব ভুল তথ্য সংশোধন করা জরুরি ছিল এবং তারই প্রেক্ষিতে সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

এছাড়া, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে যে, তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে এবং ভাতা দেওয়ার সিস্টেমকে আরও উন্নত করা হবে। এই প্রক্রিয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পন্ন করা যাবে, ততই মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং ভাতা পাওয়া মানুষগুলো উপকৃত হবে।

প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা প্রদানের মূল উদ্দেশ্য

প্রতিবন্ধী, বয়স্ক এবং বিধবা ভাতা বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। এর মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের সুবিধাবঞ্চিত জনগণের জন্য কিছুটা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, যাতে তারা জীবনের কঠিন সময়ে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।

এই ভাতা প্রদান সঠিকভাবে পরিচালিত হলে, দরিদ্র জনগণের জীবনযাত্রা অনেকটা সহজ হতে পারে। তবে, যদি এই ভাতা সঠিকভাবে বিতরণ না হয়, তাহলে তার প্রভাব পড়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষদের ওপর। বিশেষ করে, যারা বয়স্ক, বিধবা বা প্রতিবন্ধী, তারা যদি ভাতা না পান, তবে তাদের জন্য জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

শিশুদের সুরক্ষা: সামাজিক নিরাপত্তার আরও একটি দিক

গত কিছু সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান এবং শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা দেশের জন্য একটি বড় দুঃখজনক অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা জানান, এই অভ্যুত্থানে ১০৫ জন শিশু নিহত হয়েছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে নিহত শিশুদের পরিবারের প্রতি ৫০,০০০ টাকা প্রদান করা হচ্ছে।

তবে এটি শুধুমাত্র একটি পদক্ষেপ। শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় বিশেষ “কুইক রেসপন্স টিম” গঠন করা হয়েছে, যা নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার প্রতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাবে। এ ধরনের উদ্যোগগুলো একদিকে যেমন দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক, তেমনি সমাজের দুর্বল শ্রেণীর মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, তারা আগামী দিনে এমন অনেক নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যা দেশের জনগণের উন্নত জীবনযাত্রার জন্য সহায়ক হবে। এর মধ্যে বিশেষ করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য একটি আরও সঠিক ও আধুনিক সিস্টেম চালু করা হবে।

এছাড়া, দেশের কর্মহীন, শিশু এবং দরিদ্রদের জন্য নতুন নতুন সহায়ক প্রকল্প চালু করা হবে। বিশেষভাবে দরিদ্র মানুষের জন্য নানা ধরনের সহায়তা বৃদ্ধি করতে পরিকল্পনা চলছে, যেন তারা সহজেই সরকারের সহায়তা পায় এবং জীবনযাত্রা আরও উন্নত হয়।

উপসংহার

বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দেশের অনেক মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, তালিকার ভুল তথ্য এবং অসঙ্গতি দেশের দরিদ্র জনগণের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করেছে। তবে সরকার এই সমস্যার সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ভাতা প্রদান প্রক্রিয়া সংশোধন করছে।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, একটি সঠিক এবং পরিষ্কার তালিকা তৈরি করা গেলে, দেশের দরিদ্র জনগণ তাদের প্রাপ্য সুবিধা পাবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। দেশের সকল মানুষের জন্য একটি সঠিক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলাই সরকারের মূল লক্ষ্য, যা অদূর ভবিষ্যতে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উন্নয়নে যদি সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে দেশের দরিদ্র মানুষদের জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

Leave a Comment