বেসরকারি শিক্ষক অবসর কল্যাণ ভাতার নতুন খবর (ডিসেম্বর আপডেট) 

বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষক অবসর কল্যাণ ভাতার বিষয়টি এক দীর্ঘকালীন ও জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে কিছু নতুন আপডেট প্রদান করেছে, যা শিক্ষকদের জন্য একটি বড় আশার বার্তা। তবে, এর সমাধান এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি এবং শিক্ষকদের জন্য কিছু সমস্যার সমাধান এখনও বাকি। চলুন, জানি বিস্তারিত।

বেসরকারি শিক্ষক অবসর কল্যাণ ভাতা

বেসরকারি স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসার প্রায় ৭২০ হাজার শিক্ষক ও কর্মচারী দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের অবসর ও কল্যাণ ভাতা দেশের প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক কর্মচারীর জন্য নির্ধারিত। এই ভাতা দুইটি মূল খাতে প্রদান করা হয়:

  • বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট
  • বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড

এই দুটি বোর্ডের মাধ্যমে শিক্ষক কর্মচারীদের ভাতা প্রদান করা হয়। তবে, অনেক শিক্ষকের অভিযোগ রয়েছে যে, অবসর ও কল্যাণ ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় এবং নিয়মিত সময়মতো এই ভাতা প্রদান করা হয় না।

ভাতা সংক্রান্ত সমস্যার শুরু

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ৩৭,০০০ শিক্ষক ও কর্মচারী তাদের অবসর ভাতার জন্য আবেদন করেছেন। তবে, অর্থনৈতিক সংকট এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার আবেদনের মধ্যে মাত্র কয়েকটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। এই পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এক্সপার্টরা বলছেন যে, এর সমাধান করতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন।

এদিকে, কল্যাণ ভাতা সম্পর্কেও বেশ কিছু সমস্যা চলছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ১০,০০০ আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু অবসর ভাতা এবং কল্যাণ ভাতা পাওয়ার জন্য শিক্ষকদের সঠিক সময়ের মধ্যে অর্থ না পাওয়ার কারণে তারা নানা সমস্যায় পড়ছেন।

বেসরকারি শিক্ষক অবসর কল্যাণ ভাতার সমস্যার মূল কারণ কী?

এটি একটি বহুস্তরীয় সমস্যা এবং এর জন্য একাধিক কারণ দায়ী।

  • ব্যাংক জটিলতা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, অবসর সুবিধা বোর্ড এবং কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম থমকে গেছে মূলত ব্যাংক লেনদেনের জটিলতার কারণে। একসময় দুটি বেসরকারি ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং সিটিজেন ব্যাংক, শিক্ষকদের ভাতা সরবরাহ করত। তবে, ব্যাংক দুটি আর্থিক সমস্যায় পড়ে এবং শিক্ষক নেতারা তাদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য এসব ব্যাংক ব্যবহার করেন। এই কারণে ব্যাংক দুটির আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে শিক্ষকদের ভাতা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়।

  • সরকারি বরাদ্দের অভাব

অবসর ও কল্যাণ ভাতা প্রদানে নিয়মিত সরকারি বরাদ্দ না থাকায় বোর্ড ও ট্রাস্টের তহবিল পর্যাপ্ত হতে পারে না। সরকারের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সহায়তা প্রদান করা হলেও তা যথেষ্ট নয়।

  • ব্যক্তিগত লাভের চাহিদা

শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ভাতার টাকা দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকার পেছনে কিছু রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের সঞ্চিত টাকা কখনও সরকারি তহবিল থেকে চলে গেছে, কখনও বা এটি কিছু ব্যক্তির হাতেও চলে গেছে।

বেসরকারি শিক্ষক অবসর কল্যাণ ভাতার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি সামলাতে কিছু নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারি ব্যাংক তহবিলে অর্থ জমা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষক কর্মচারীদের অবসর এবং কল্যাণ ভাতা নির্বিঘ্নে প্রদান করা যেতে পারে। তবে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হতে কিছু সময় লাগতে পারে।

এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক এর মাধ্যমে পিএল (পার্সোনাল লেজার) হিসাব খুলে এবং আইবাস প্লাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে ভাতা প্রদান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষক কর্মচারীদের ভাতা দেওয়া সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের ভোগান্তি

শিক্ষকরা অবসর বা কল্যাণ ভাতা না পাওয়ার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন। বেশিরভাগ শিক্ষক বলছেন, “অবসর ভাতা পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনও চার বছর পরও সেই ভাতা পাওয়া যাচ্ছে না।” তাদের মতে, সরকারি সহায়তা এবং নিয়মিত বরাদ্দের অভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এছাড়া, শিক্ষকদের বেতন থেকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে রাখা হয়, যা তাদের অবসর ভাতা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই টাকা যথাসময়ে পরিশোধ না হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষক অবসর কল্যাণ ভাতার ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

শিক্ষক কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ভাতা প্রদানে দ্রুত সমাধান আসতে পারে যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। আইবাস প্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়িত হলে দ্রুত ভাতা প্রদান সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া, শিক্ষক নেতাদের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে যে, তারা সমন্বিতভাবে এই সমস্যার সমাধানে কাজ করবেন।

চুড়ান্ত মন্তব্য 

বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ভাতা একটি দীর্ঘদিনের সমস্যার সম্মুখীন। তবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ এবং নতুন পদক্ষেপগুলি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে শীঘ্রই শিক্ষকরা তাদের পাওনা অর্থ পেতে সক্ষম হবেন। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দেশের শিক্ষকদের জন্য একটি বড় ধরনের আর্থিক সুরক্ষা তৈরি হবে, যা তাদের অবসরের পর শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনে সহায়ক হবে।

শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য এটি একটি বড় সুখবর হলেও পুরোপুরি সমাধান পেতে এখনও কিছু সময় লাগবে। তবে, সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটি একটি ভালো উদ্যোগ এবং শীঘ্রই সমস্যার সমাধান আসবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে। সবশেষে, উক্ত বিষয়ে আপডেট তথ্য জানতে চোখ রাখুন প্রতিবন্ধী বিডি ডট কম ওয়েবসাইটের সংবাদ ক্যাটাগরিতে, ধন্যবাদ।

Visited 356 times, 5 visit(s) today

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *