বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধা || আবেদনের নিয়ম ২০২৪

বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাওয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক বা কর্মচারী যখন চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ, পদত্যাগ, বা মৃত্যুবরণ করেন, তখন তারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে এই সুবিধাগুলি পেতে পারেন। পাশাপাশি আবেদন প্রক্রিয়াটি এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, যার ফলে আবেদনকারীদের সময় সাশ্রয় ও সুবিধাজনক হয়।

বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধার জন্য ২০০২ সালে “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড” গঠিত হয়। শিক্ষকরা অবসর নেওয়ার পর এককালীন অর্থ সহায়তা পান, যা তাদের বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশের ভিত্তিতে গণনা করা হয়।

অন্যদিকে, বেসরকারি শিক্ষকদের কল্যাণ সুবিধার জন্য “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট” গঠিত হয়েছে। এই ট্রাস্ট থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীরা বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহায়তা পেতে পারেন, যেমন জীবন বিমা, চিকিৎসা সহায়তা ইত্যাদি।

বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধা আবেদন প্রক্রিয়া

প্রথমে কল্যাণ ট্রাস্টের ওয়েবসাইট (www.ngte-welfaretrust.gov.bd) এ প্রবেশ করতে হবে। সেখানে একটি অনলাইন ডাটাবেজ সিস্টেমে লগইন করতে হবে।  লগইনের পর একটি তথ্য ফরম প্রদর্শিত হবে, যা চাহিদা অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। 

তাছাড়া “অবসর” নামক মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও খুব সহজেই আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যাবে। অবসর অ্যাপের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উক্ত আর্টিকেলটি পড়ুন। যাইহোক, ফরমটি পূরণ করার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে জমা দিতে হবে।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:

  • প্রথম এমপিও এবং শেষ এমপিওর কপি।
  • শিক্ষক বা কর্মচারীর বিবরণসহ সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানের প্রধানের প্রত্যয়নপত্র।
  • সভাপতির ফরওয়ার্ডিং চিঠি।
  • প্রথম এমপিও সংশ্লিষ্ট একুইটেন্স রোল।
  • শেষ এমপিও বিল ফরম।
  • শেষ ছয় মাসের বেতন উত্তোলনের ব্যাংক বিবরণী।
  • মৃত্যুজনিত ক্ষেত্রে নমিনির যাবতীয় কাগজপত্র।

আবেদন জমা নেয়া এবং প্রক্রিয়াকরণ

প্রথমে সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস স্ক্যানিংয়ের পর সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে। আবেদনটি সফলভাবে জমা হলে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে একটি OTP এসএমএস পাঠানো হবে, যা সাবমিট করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের EMIS সেলের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদনটির ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবে। 

অতঃপর, অডিট কর্মকর্তার যাচাইকরণের পর উপ-কমিটি আবেদনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বোর্ড সভায় উপস্থাপন করবে। অনুমোদিত হলে অর্থ অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা কর্মচারীর ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

ডিজিটাল প্রক্রিয়ার সুবিধা:

আগের জটিল পদ্ধতির পরিবর্তে এখন ইন্টারনেট এবং অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহারের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে আবেদনকারীরা ঘরে বসেই তাদের আবেদনটির বর্তমান অবস্থা জানতে পারছে। তাছাড়া ৩৩৩ নাম্বারে কল দিয়ে সরাসরি অবসর ও কল্যাণ সুবিধা সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য সহজেই জেনে নিতে পারছে। বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের এই নতুন ডিজিটাল ব্যবস্থাটি সত্যিই এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য আরও সহজ ও নির্ভরযোগ্য সেবা নিশ্চিত করছে।

বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ভাতার নিয়ম

এই পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ভাতার নিয়ম সংক্রান্ত পুরো প্রসেসটি ব্যখ্যা করবো, এখানে কি কি করতে হবে পুরো ধারণা পেয়ে যাবেন। 

কাজের বিবরণপ্রয়োজনীয় নথি বা শর্তাবলী
আবেদন ফরম পূরণযথাযথভাবে আবেদন ফরম “ক” পূরণ করা এবং সঠিক তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক।
১ম এমপিও এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রপ্রথম MPO-এর সত্যায়িত ফটোকপি এবং একুইটেন্স রোল সংযুক্ত করতে হবে। যদি হারিয়ে যায় বা অস্পষ্ট হয়, ১৯৮৪-১৯৯০ সালের মধ্যে MPO এবং একুইটেন্স রোলের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
শেষ এমপিও ও ব্যাংক সংক্রান্ত নথিপত্রশেষ MPO, একুইটেন্স রোল, বিল ফরমের ফটোকপি, সর্বশেষ ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।
পাসপোর্ট সাইজের ছবি২ কপি সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং প্রধানের ১ কপি লেমিনেট করা ছবি সত্যায়িত করে জমা দিতে হবে।
প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নপত্রচাকরির বিস্তারিত বিবরণসহ প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।
সভাপতির অগ্রগামীপত্রসভাপতির স্বাক্ষরিত অগ্রগামীপত্র আবেদন ফরমের সাথে জমা দিতে হবে।
ফটোকপি সত্যায়নসমস্ত ফটোকপির উপরে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সীল ও ইনডেক্স নম্বর উল্লেখ করে সত্যায়ন করতে হবে।
জন্মতারিখের প্রমাণSSC সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হবে।
একাধিক ইনডেক্স থাকলেএকাধিক ইনডেক্সের ক্ষেত্রে প্রতিটি ইনডেক্স-এর জন্য আলাদা আবেদন করতে হবে।
একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেপ্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রধানের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।
পদত্যাগের ক্ষেত্রেপদত্যাগপত্রের কপি ও কমিটির রেজুলেশন সংযুক্ত করতে হবে।
বয়স গণনা৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত বেতন উত্তোলন করা যাবে। অতিরিক্ত উত্তোলিত অর্থ ট্রেজারিতে ফেরত দিতে হবে।

পরিশেষে কিছু কথা 

বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য উপরে উল্লেখ্যিত ধাপগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব নিয়ম অনুসরণ করে আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার মাধ্যমেই বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাবেন। এই বিষয়ে আরো জানতে অবসর ভাতা সংক্রান্ত তথ্য অনুসরণ করুন। 

Visited 311 times, 4 visit(s) today

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *