যে পাঁচটি রোগ হলে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা পাওয়া যায়
প্রিয় পাঠক আপনারা সকলে কেমন আছেন, আমি দির্ঘদিন যাবত শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য ছিলাম, আজ থেকে একটু সুস্থ্য বোধ করছি, অসুস্থ্য অবস্থায় আমার মনে হল আমার মত অনেক ব্যক্তিই তো অসুস্থ্য হন, অনেক বড় বড় রোগ তাঁদের হয় এসকল মানুষদের জন্য একটি পোস্ট লেখা খুব দরকার। আজকের আলোচ্য বিষয় হল যে পাঁচটি রোগ হলে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা পাওয়া যায়। সমাজসেবা অধিদপ্তর ক্যান্সার কিডনি, লিভার সিরোসিস, ষ্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এককালিন ৫০ হাজার টাকা আর্থীক সহায়তা প্রদান করে এই টপিকে আজ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। কারা এই সহায়তা পাবার যোগ্য, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ এই সহায়তা পাবেন কি না সহায়তা পেতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন সকল বিষয়ে আলোকপাত করা হবে তাই পোস্টটি সম্পুর্ণ পড়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ তাই এই দেশে ক্যান্সার কিডনি লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগ, থ্যালাসেমিয়া এসকল রোগের চিকিৎসা অত্যান্ত ব্যায়বহুল, পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি যখন ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিজ বা ষ্ট্রোকে প্যারালাইজড হয়ে যায় তখন সেই পরিবারটি খুবই বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়ে। একে তো জপার্জনকারী ব্যক্তি অসুস্থ্য অন্যদিকে অত্যান্ত ব্যায়বহুল চিকিৎসা, এই দুই সমস্যার মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেক পরিবার ভিটে মাটি বিক্রি করে নিশ্ব হয়ে যায়, অভাবি গরিব মানুষদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সালে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে।
কোন কোন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ আবেদন করতে পারবেন
ক্যান্সার কিডনি, লিভার সিরোসিস, ষ্ট্রোকে প্যারালাইসিস, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ এই অনুদানের জন্য ফরম পুরণ করে সমাজসেবা অফিসে স্বশরীরে হাজির হয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন।
আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।
রোগের সত্যতার প্রমাণক হিসেবে ক্যান্সারের জন্য হিস্টপ্যাথলজি/সাইটোপ্যাথলজি/বন ম্যারু রিপোর্ট ও অন্যান্য মেডিকেল রিপোর্টের কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। কিডনি রোগের ক্ষেত্রে অ্যকিউব রেনাল ফেইলিওর ক্রনিক রেনাল ফেইলিওর রোগে আক্রান্ত ডায়ালাইসিস রিপোর্ট। লিভার সিরোসিস রোগের ক্ষেত্রে লিভারের আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ও অন্যান্য রিপোর্ট প্রয়োজন হবে। ষ্ট্রোকে প্যারালাইজড রোগীদের ক্ষেত্রে নিওরোলজিষ্ট দাক্তারের প্রত্যায়নপত্র থাকতে হবে ও এমআর আই, সিটি স্কান রিপোর্ট থাকতে হবে। জন্মগত হৃদরোগের ক্ষেত্রে ইকো কাডিওগ্রাম ও অন্যান্য রিপোর্ট থাকতে হবে। থ্যালাসেমিয়া রোগের ক্ষেত্রে রক্তের হিমোগ্লোবিন ইলে কন্ট্রোফোরেসিস রিপোর্ট থাকতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম সনদ এর অনুলিপি গেজেটেট অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে।
আবেদন যাচাই বাছাই এর প্রকৃয়া
শহর/উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদনপত্র জমা দেবার পর উক্ত আবেদনপত্র শহর/উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্মকর্তা উক্ত আবেদনপত্র উপ পরিচালক জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে প্রেরণ করবেন, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক উক্ত আবেদনপত্রগুলি যাচাই বাছাই করে উপযুক্ত আবেদনপত্রগুলি জেলা অনুদান মঞ্জুরি কমিটির নিকট উপস্থাপন করবেন। জেলা অনুদান মঞ্জুরি কমিটি সকল আবেদনপত্র যাচাই বাছাই করে অনুদান পাবার যোগ্য ব্যক্তিদের আবেদনগুলি অনুমোদন করবে এবং অনুমোদনের ১৫ দিনের মধ্যেই বরাদ্দকৃত টাকা রোগিকে বুঝিয়ে দেবার ব্যবস্থা করবে। আবেদন গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমীহিন, অসহায় গরীব, এতিম, পোষ্য, স্বামী পরিতক্তা,শিশু, সন্তানহীন, ক্ষুদ্র নিগোষ্ঠী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
আবেদন করবেন যেভাবে
জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম সনদের অনুলিপি গেজেটেট অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে এবং মেডিকেল সংক্রান্ত কাগজপত্র একজন রেজিস্টেট দাক্তারের নিকট থেকে সত্যায়িত করতে হবে, জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জেন রোগি সনাক্ত করতে পারবেন। এসকল সত্যায়িত কাগজপত্র আবেদনপত্রের সাথে পিন মেরে সংযুক্ত করতে হবে, আবেদন ফরম এখান থেকে ডাউনলোড করা যাবে কিংবা সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকেও ডাউনলোড করা যাবে। আবেদন করার আগে এ সংক্রান্ত নীতিমালা অবশ্যই পড়ে নেবেন নীতিমালা এখান থেকে ডাউনলোড করা যাবে। ডাউনলোড করা ফরমটি প্রিন্ট করে ফরমে চাহিত সকল তথ্য সঠিকভাবে পুরণ করবেন, কোন তথ্য ভুল বা ত্রুটিপুর্ণ থাকলে উক্ত আবেদনটি বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই ফরম পুরণে সর্বচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ফরম পুরণ করা হয়ে গেলে অন্যান্য কাগজপত্র ফরমের সাথে পিন দিয়ে সংযুক্ত করে নিজ উপজেলা/শহর সমাজসেবা অধিদপ্তরে গিয়ে আবেদনপত্র জমা দিবেন এবং রিসিট গ্রহণ করবেন। আবেদন গৃহিত হলে অফিস থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করা হবে, আবেদনপত্র জমা দেয়া থেকে অনুমোদন হওয়াতে ১ মাস সময় লাগতে পারে।
নোট: আবেদনকারী ব্যক্তি যদি শিশু হয় তবে তাঁর বৈধ অভিভাবক উক্ত শিশুর পক্ষে আবেদন করতে পারবেন, আবেদনকারী রোগী যদি আবেদন করার পর এবং টাকা পাবার আগে মারা যায় তবে উক্ত অর্থ আবেদনকারীর মনোনীত নমিনি (যাকে আবেদনকারী জীবিত থাকা কালিন নমিনি মনোনীত করেছিলেন) নমিনিকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। একই অর্থ বছরে দুইবার আবেদন করা যাবে না অর্থাৎ মনে করা যাক রহিম সাহেব ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে এই সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন, তার আবেদন অনুমোদন হবার পর তিনি পুনরায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে নতুন অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তবে তিনি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ফরমের নির্ধারিত স্থানে বিশেষজ্ঞ দাক্তারের স্বাক্ষর থাকতে হবে।
চিকিৎসা অনুদান ২০২৪ চিকিৎসা সহায়তা ২০২৪
প্রিয় পাঠক আশা করছি এই লেখাটি আপনাদের ভাল লাগবে আপনাদের আশে পাশে যদি এমন রোগী থাকে তবে তাদের সাথে এই তথ্যটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। লেখাটি আপনাদের কেমন লাগল তা কমেন্ট করে জানাবেন, সবাই ভাল থাকবেন এবং নিয়মিত ভিজিট করবেন প্রতিবন্ধী বিডি ডট কম সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।