প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া (২০২৪ এর নতুন পদ্ধতি) 

আমাদের মধ্যে যারা প্রতিবন্ধী তারা এমনিতেই প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আছে, তাদের সাহায্যের জন্য নেয়া উদ্যোগ তাদের সুবিধা মোতাবেক হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত। আমাদের প্রতিবন্ধী ভাই ও বোনেরা নিজেকের হক (ভাতা) আদায় করতে ঘুরে অফিসের পর অফিস যা অনেকটাই সময় সাপেক্ষর পাশাপাশি হয়রানিমূলকও। 

এমনকি অনেকেই রয়েছে যারা বিভিন্ন দালাল চক্রের মধ্যেও পরে যায়। এসকল সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার অনলাইনে প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার সুযোগ করে দিয়েছে। আর এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে “২০২৪ সালে এসে প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম” সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। 

প্রতিবন্ধী ভাতা সম্পর্কে ব্যাসিক তথ্য 

দেশের সকল প্রতিবন্ধীদের জীবন সহজ ও সুন্দর করার লক্ষ্যে তাদের ভাতা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো ২০০৫-২০০৬ অর্থবছর থেকেই। বর্তমানে প্রায় ২৯ লক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ভাতা এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যক্তি অধিকার সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর ৩ নং ধারা অনুযায়ী যেকোনো ধরণের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জীবনকে সহজ করে দেয়ার লক্ষ্যে সরকার থেকে অনুদান দেয়া শুরু হয়, যাকে ভাতা নামে চিনে থাকি। 

প্রতিবন্ধী ভাতা কারা পাবে ও কারা পাবে না? 

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ভাতা শুধুমাত্র যারা প্রকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তারাই পাবে। এবং উক্ত বিষয়ে টি নিশ্চিত করতে সমাজসেবা অধিদপ্তর এর পক্ষ থেকে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে এই শর্তগুলো পূরণ হলে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া যাবে। এই পর্যায়ে কারা ভাতা পাবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছি। 

যারা প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে

১) আবেদনকারীকে অবশ্যই শারীরিক বা মানসিকভাবে ৬০% প্রতিবন্ধী হতে হবে ।

২) আবেদনকারী যে এড়িয়াতে বসবাস করে সেই এরিয়া থেকেই আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে তাকে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। 

৩) প্রতিবন্ধীর প্রমাণ সরুপ “সুবর্ণ নাগরিক কার্ড” থাকতে হবে। 

৪) যার আবেদন করা হয়েছে তাকে কমিটি কর্তৃক বাছাই করে নির্বাচন করা হবে। 

৫) আপনি যেখানে অবস্থান করছেন এটাই যে আপনার স্থায়ী ঠিকানা সেটা নিশ্চায়নের জন্য জেলা কর্তৃক নিবন্ধন ও পরিচয় পত্র গ্রহণ করতে হবে। 

৬) বিনা আয়ের কিংবা দারিদ্র সীমার ভেতরে থাকা প্রতিবন্ধীরাই কেবল ভাতা এর জন্য আবেদন করতে পারবে। 

৭) ইউনিয়ন চেয়ারম্যান / পৌরসভার মেয়র এর সুপারিশ প্রয়োজন, এটা ছাড়া ভাতা মঞ্জুর হবে না। 

৮) প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাথাপিছু আয় ছত্রিশ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। 

৯) প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বয়স ৬ এর বেশি হতে হবে। 

যারা প্রতিবন্ধী হয়েও ভাতা পাবে না 

১) প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যদি সরকারি কর্মজীবি কিংবা পেনশন প্রাপ্ত কর্মজীবি হয়ে থাকে তবে ভাতা পাবে না। 

২) অন্য কোনো সরকারি অনুদান প্রাপ্ত হয়ে থাকলে প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে না 

৩) সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থা থেকে নিয়মিত অনুদান পেলে প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে না। 

প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হওয়ার মানদন্ড 

  • আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। 
  • জন্মনিবন্ধন / জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে।
  • প্রার্থীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচিত হবে।
  • বয়স্ক প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। 
  • ভূমি / গৃহহীনদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। 
  • নারী প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। 
  • বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী হলে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বেশি থাকবে। 

প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

আপনি যখন প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইনে আবেদন করতে যাবেন তখন আপনাকে বেশ কিছু ডকুমেন্ট কাছে রেখেই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আবেদনের সময় এই কাগজপত্র গুলো দেখে দেখে আবেদন ফরম পূরণ করবেন এবং আবেদন ফরম বা আবেদন পত্র প্রিন্ট করে আপনার এরিয়ার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কিংবা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় সমস্ত ডকুমেন্টসহ আপনার জেলার সমাজসেবা অধিদপ্তরে গিয়ে জমা দিতে হবে। এবার তাহলে জেনে নেই যে কোন ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হবে: 

১) আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ এর নিচে হয় তবে জন্ম নিবন্ধন সনদ

২) আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ এর বেশি হয় তাহলে জাতীয় পরিচয় পত্র

৩) একটি সচল মোবাইল যেখানে বিকাশ / নগদ একাউন্ট খোলা আছে

প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া ২০২৪ 

এই পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে। এই প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ কাজ গুলো আপনি নিজে ঘরে বসে হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কিংবা ল্যাপটপ বা কম্পিউটার দ্বারা করে ফেলতে পারেন। 

অন্যথায় আপনার কাছে যদি প্রক্রিয়া গুলো কঠিন মনে হয় তবে নিকটবর্তী যে কোন কম্পিউটারের দোকান থেকে আবেদন সম্পন্ন করতে পারেন। তবে আশা করছি এই টিউটরিয়ালটি মনোযোগ দিয়ে দেখলে আপনি নিজেই আবেদন করতে পারবেন। 

ধাপে ধাপে প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম 

১ম ধাপ

আপনার ডিভাইজ থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তর এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে [http://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication] প্রবেশ করুন। সেখানে বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া থাকবে। আপনি সরাসরি “আমি বুজেছি পরবর্তী ধাপে যান” নামক অপশনে ক্লিক করে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করবেন। 

২য় ধাপ 

এখানে প্রথমেই একটা Box দেখতে পারবেন যেখান থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা অপশন সিলেক্ট করে দিন। এবং নিচে NID Card Number অপশন সিলেক্ট করে নাম্বার ও জন্মতারিখ লিখে “যাচাই করুন” নামক অপশনে ক্লিক করুন। 

তবে আপনার যদি NID card না থাকে তবে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে এপ্লাই করতে পারবেন। এক্ষেত্রে নিম্মে ছবিতে প্রদর্শিত তথ্যগুলো দিতে হবে। যদিও NID দিয়ে যখন করবেন তখন Automatic ভাবে তথ্য গুলো Fill up হয়ে যাবে। 

৩য় ধাপ 

এই পর্যায়ে Additional কিছু তথ্য দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: 

  • বৈবাহিক অবস্থা
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • পরিবারের সদস্য সংখ্যা (পুরুষ, মহিলা ও হিজড়া)
  • পেশা
  • বার্ষিক আয়
  • স্বাস্থ্যগত বা কর্মক্ষমতা সংক্রান্ত তথ্য
  • সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক সুবিধার তথ্য
  • বাসস্থান তথ্য
  • ভূমির পরিমাণ
  • প্রতিবন্ধীর ধরণ ডিআইএস অনুযায়ী
  • প্রতিবন্ধীর মাত্রা ডিআইএস অনুযায়ী

ধাপ ৪

এই পর্যায়ে যোগাযোগ করার জন্য তথ্য প্রদান করতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ঠিকানা
  • মোবাইল নাম্বার 
  • ইমেইল 

পাশাপাশি এইসকল তথ্যের গভিরতা রয়েছে যা সঠিক ভাবে হালনাগাদ দিতে হবে। স্পষ্টভাবে বুঝার জন্য নিম্মে ফরমের ছবি দিচ্ছি এখান থেকে ধারণা দিতে পারেন যে কি কি তথ্য এই ধাপে দিতে হবে। 

সকল তথ্য সঠিক ভাবে সাবমিট করা হয়ে গেলে “সংরক্ষন” নামক অপশনে ক্লিক করে সাবমিট করে দিন। মনে রাখতে হবে যে, সাবমিট করার আগে অবশ্যই আবেদন ফরমটি ভালো ভাবে চেক করে নিবেন। কেননা, একবার সাবমিট করা হয়ে গেলে সেটা আর “Edit” করার সুযোগ থাকবে না। 

আবেদন করা হয়ে গেলে “Print” অপশন আসবে, সেখানে ক্লিক করে প্রিন্ট করে নিন। অথবা PDF ডাউনলোড করে রাখুন। কেননা, এটিকে এবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান / পৌরসভার কাউন্সিলরের কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে এনে সমাজসেবা দফতরে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহকারে জমা দিতে হবে। 

ব্যাস, আপনার কাজ শেষ। আপনার প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন সম্পন্ন হয়েছে। 

প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর 

প্রতিবন্ধী ভাতা কত টাকা? 

শুরুর দিকে ২০০৫ সালে জনপ্রতি ভাতা এর পরিমাণ মাসিক হারে ২০০ টাকা থাকলেও। ২০২৪, এর সর্বশেষ আপডেট তথ্য অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ভাতা ৮৫০ টাকা করে দেয়া হয় মাসে। 

প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে কি সুবর্ন কার্ড লাগবেই? 

হ্যাঁ, প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে সুবর্ণ কার্ডের প্রয়োজন কেননা, এটিই একমাত্র দলিল প্রতিবন্ধী চিহ্নিতকরণে। 

কত মাস পরপর প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয়?

প্রতি ৩ মাস পরপর ৩ মাসের প্রতিবন্ধী ভাতা এর টাকা একত্রে আপনার নাম্বারে পাঠানো হয়। 

চুড়ান্ত মন্তব্য 

আশা করি উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে “প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া” সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য গুলো সহজ ভাষায় বুজতে পেরেছেন। দেশের সকল সুবিধা বঞ্চিত প্রতিবন্ধীদের এটা হক, নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে সঠিক উপায়ে প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহণ নিশ্চিত করুন. আর প্রতিবন্ধীদের সুযোগ সুবিধা বিষয়ক যেকোনো তথ্য জানতে ভিজিট করুন প্রতিবন্ধী বিডি ওয়েবসাইটটি, ধন্যবাদ। 

Visited 2,350 times, 1 visit(s) today

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *