প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুদান দিবে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (JPUD)
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও শিক্ষার প্রসারে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী ছিল অবহেলিত। প্রতিবন্ধীদের জীবন পরিচালনের জন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ধরণের অনুদানের। সেই লক্ষ্যে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (JPUD) বিভিন্ন ভাবে সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুদান এর ব্যবস্থা করে আসছে। এই আর্টিকেলে জানাবো জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুদান নেয়ার উপায় ও কি কি প্রয়োজন হবে সেই বিষয়ে।
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (JPUD)
১৯৯৯ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা ২০২৩ সালে আইনগত স্বীকৃতি পায়। এর লক্ষ্য ছিল প্রতিবন্ধী জনগণের উন্নয়ন, সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিত করা।
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (JPUD) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সেবা ও কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করা এবং তাদের জীবনমান উন্নত করা। নিচে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ তুলে ধরা হলো:
১. চিকিৎসা ও থেরাপি সেবাঃ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধী সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনামূল্যে থেরাপি প্রদান। ভ্রাম্যমাণ থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে ওয়ান-স্টপ সেবা। অটিজম রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে থেরাপি এবং কাউন্সেলিং সেবা।
২. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণঃ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এবং অটিজম শিশুদের জন্য বিশেষ স্কুল পরিচালনা। প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বই ও বিশেষ শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ।
৩. চলাচলের সহায়তাঃ হুইলচেয়ার, ক্রাচ, হিয়ারিং এইড, হোয়াইট ক্যান, এবং কৃত্রিম অঙ্গ সরবরাহ। বিনামূল্যে এসব উপকরণের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ব্যবস্থা।
৪. অর্থনৈতিক ও সামাজিক সেবাঃ ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান এবং কর্মজীবী প্রতিবন্ধীদের জন্য হোস্টেল পরিচালনা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ।
৫. তথ্য ও প্রযুক্তি সুবিধাঃ প্রতিবন্ধীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ। তথ্য সংরক্ষণ ও প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে ডাটাবেস তৈরি।
৬. অন্যান্য উদ্যোগঃ অটিজম ও এনডিডি কর্নার চালু করা। বিশেষ শিশুদের জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা।
প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুদান সমূহ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
#১. সহায়ক উপকরণ প্রদান
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দৈনন্দিন জীবন সহজতর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সহায়ক উপকরণ সরবরাহ করা হয়। এগুলোর মধ্যে হুইলচেয়ার, ক্রাচ, কৃত্রিম অঙ্গ, সাদা ছড়ি, টকিং ডিভাইস, এবং শ্রবণ ডিভাইস অন্তর্ভুক্ত। এই উপকরণগুলো বিশেষভাবে তৈরি, যা ব্যবহারকারীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় সাহায্য করে।
আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- লিখিত আবেদন: সহায়ক উপকরণের প্রয়োজনীয়তার বিস্তারিত উল্লেখ করে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
- প্রতিবন্ধী সনদপত্র: আবেদনকারীর প্রতিবন্ধিতা প্রমাণ করার জন্য এটি বাধ্যতামূলক।
- জাতীয় পরিচয়পত্র: আবেদনকারীর পরিচয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজন।
- দৃশ্যমান প্রতিবন্ধিতার ছবি: সরাসরি প্রতিবন্ধিতার প্রমাণ হিসেবে জমা দিতে হয়।
- অসচ্ছলতার প্রমাণপত্র: আবেদনকারী অসচ্ছল হলে তার আর্থিক অবস্থার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
- স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা মেয়রের সুপারিশপত্র: এটি আবেদনকারীর স্থানীয় প্রতিনিধির অনুমোদন নিশ্চিত করে।
#২. কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন
দুর্ঘটনায় বা জন্মগতভাবে বিকল অঙ্গের পরিবর্তে কার্যকর কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের সেবা দেওয়া হয়। এই সেবা প্রতিবন্ধীদের জীবনযাত্রা সহজতর করে এবং তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- রিহ্যাবিলিটেশন প্র্যাকটিশনারের পরামর্শপত্র: চিকিৎসকের সুপারিশপত্র জমা দিতে হবে।
- প্রতিবন্ধী কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র: আবেদনকারীর প্রতিবন্ধিতা এবং পরিচয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজন।
#৩. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আর্থিক অনুদান
দুর্ঘটনায় বা জন্মগতভাবে বিকল অঙ্গের পরিবর্তে কার্যকর কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজনের সেবা দেওয়া হয়। এই সেবা প্রতিবন্ধীদের জীবনযাত্রা সহজতর করে এবং তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- আবেদনপত্র: আবেদনকারীর হোস্টেলের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ থাকতে হবে।
- প্রতিবন্ধী কার্ড: প্রতিবন্ধিতা নিশ্চিত করতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ: কর্মজীবী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার প্রমাণপত্র।
#৪. চাকরিপ্রত্যাশী কর্মজীবী হোস্টেল কার্যক্রম
কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্বল্প খরচে থাকার জায়গা এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এই উদ্যোগ তাদের কর্মজীবনে সুবিধা নিশ্চিত করে।
আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- আবেদনপত্র: আবেদনকারীর হোস্টেলের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ থাকতে হবে।
- প্রতিবন্ধী কার্ড: প্রতিবন্ধিতা নিশ্চিত করতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ: কর্মজীবী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার প্রমাণপত্র।
#৫. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ
কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্বল্প খরচে থাকার জায়গা এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এই উদ্যোগ তাদের কর্মজীবনে সুবিধা নিশ্চিত করে।
আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- জাতীয় পরিচয়পত্র: আবেদনকারীর পরিচয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজন।
- প্রতিবন্ধী সনদপত্র: শিশুর প্রতিবন্ধিতা প্রমাণ করতে হবে।
#৬. চাকরি মেলা আয়োজন
প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়।প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে চাকরি মেলা আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন নিয়োগকর্তা অংশগ্রহণ করে এবং দক্ষ প্রতিবন্ধীদের চাকরির সুযোগ প্রদান করে।
আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- জাতীয় পরিচয়পত্র: আবেদনকারীর পরিচয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজন।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ: যোগ্যতার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
#৭. বেসরকারি সংস্থার জন্য অনুদান
যেসব বেসরকারি সংস্থা প্রতিবন্ধীদের সেবায় নিয়োজিত, তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এই অনুদান তাদের কার্যক্রমকে আরও প্রসারিত করতে সাহায্য করে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- নির্ধারিত আবেদন ফরম: সরকারি নিয়ম মেনে নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হবে।
- সংস্থার কার্যক্রমের বিবরণ: সংস্থার কাজের উদ্দেশ্য ও অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুদান পেতে আবেদন পদ্ধতি
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুদান পাওয়া যায়। এর জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হয়। সঠিকভাবে ফরম পূরণ করতে হলে ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে পুরণকৃত একটি নমুনা ডাউনলোড করে দেখে নিতে পারেন। সেখানে ফরম পূরণের নিয়ম, কার বরাবর আবেদন করতে হবে, এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বিবরণ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা আছে।
ফাউন্ডেশনের আবেদন ফরম ডাউনলোড করার লিঙ্ক: এখানে ক্লিক করুন। অথবা নিচের দেয়া পিডিএফটি ডাউনলোড করে নিন।
আবেদন ফরম পূরণ করা এবং তার সাথে নিদিষ্ট প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যুক্ত করে তাদের ঠিকানায় গিয়ে আবেদন জমা করতে হবে। তাছাড়া যদি কোনো সংগঠন কিংবা সংস্থা আবেদন করতে ইচ্ছুক হয় তবে বেশ কিছু কন্ডিশন অনুসরণ করে আবেদন করতে হবে। এই বিষয়ে তাদের ওয়েবসাইটে অফিসিয়াল নোটিশ দেয়া আছে।
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ঠিকানা
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন,
এ/২, সেকশন-১৪, মিরপুর, ঢাকা-১২০৬।
ফোন: ০২৮০৩৫০৫২
চুড়ান্ত মন্তব্য
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী জনগণের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে প্রতিবন্ধীরা এখন সমাজে সসম্মানে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারছে। আপনার বা পরিচিত কারও প্রয়োজনে এই সেবাগুলো গ্রহণ করুন এবং প্রতিবন্ধী উন্নয়নে ভূমিকা রাখুন। এবং প্রতিবন্ধী বিষয়ক যেকোনো তথ্যের জন্য আমাদের অনুসরণ করুন।