প্রতিবন্ধীদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষন দেয়ার ব্যবস্থা করেছে অ্যাক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন

শুধু করছি দারুন একটা তথ্য দিয়ে, সেটি হলো অ্যাক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান করছে। এই প্রশিক্ষণটি বিশেষভাবে তাদের জন্য, যারা বাড়িতে বসে অনলাইনে কাজ করতে চান, কিন্তু যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে বাধাপ্রাপ্ত। 

বাংলাদেশে চাকরির বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ, যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘর থেকে কাজ করার সুযোগ আছে, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য হতে পারে এক বিশাল কর্মসংস্থান। অ্যাক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই অনলাইন প্রশিক্ষণটি সরাসরি তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুলে দেবে।

অ্যাক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম

অ্যাক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এবং একটি বাধামুক্ত পরিবেশ প্রদান করা। ফাউন্ডেশন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নানা প্রকল্প পরিচালনা করছে।

ফাউন্ডেশনের উল্লেখযোগ্য প্রকল্প গুলো হলো: সাসটেইনেবল এডুকেশন সাপোর্ট ফর ডেফ চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ (এসইএস-ডিসিবি), সম্প্রদায়ে ন্যায়বিচারের অ্যাক্সেস (এটুজিসি), প্রমোটিং ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্যা কান্ট্রিস জিডিএস-১৮ কমিটমেন্টস এবং অন্যান্য প্রকল্প। 

অ্যাক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন কী ধরনের প্রশিক্ষণ দিবে? 

এই প্রশিক্ষণে নিম্নলিখিত বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা যাবে:

  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • ভিডিও এডিটিং
  • ওয়েবসাইট ডিজাইন
  • ইউআই/ইউএক্স ডিজাইন
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
  • কন্টেন্ট রাইটিং
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
  • এবং অন্যান্য বিভিন্ন অনলাইন কাজ

প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য কী কী প্রয়োজন?

প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে আগ্রহী ব্যক্তির কাছে কিছু সাধারণ জিনিস থাকতে হবে:

  • কম্পিউটার বা স্মার্টফোন
  • ইন্টারনেট কানেকশন (সেলুলার বা ওয়াইফাই)
  • আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রতিবন্ধী হতে হবে। অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন না।

প্রতিবন্ধীদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষনের জন্য আবেদন পদ্ধতি

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য গুগল ফর্ম পূরণ করতে হবে। আবেদন পত্র জমা দেওয়ার পর ফাউন্ডেশন তাদের সাথে যোগাযোগ করবে। আবেদন প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত।

আবেদন ফরম 

[https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLSeBIKx8T9rG_sqWr01Q3_UGymuPDBXJJtMXjMw9nsRG1ffOkg/viewform?vc=0&c=0&w=1&flr=0&fbclid=IwZXh0bgNhZW0CMTEAAR0N0xXOU7-3RCodt43QGM-i10wi7C2QIW7KKjgiLHk7iFT1ur89enOkw4g_aem_SdnlPcKJQiH_ElACdarElg&pli=1]

কেন এই প্রশিক্ষণ নিবেন?

আপনি যদি একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হন এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আপনার আয়ের পথ তৈরি করতে চান, তবে এই প্রশিক্ষণটি আপনার জন্য সঠিক সুযোগ হতে পারে। যেমন একজন প্রতিবন্ধী কর্মী, আপনার কাজের সুযোগ সীমিত, কিন্তু অনলাইনে কাজ করার মাধ্যমে আপনি নিজেই আপনার কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবেন।

আমরা জানি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অনেক সময় কম বেতন বা অসম্মানজনক কাজের শিকার হন। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যিনি একটি জুতার দোকানে কাজ করেন, তার মাসিক বেতন ৪,০০০ টাকা, যা খুবই অল্প। তাই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা ও আয়ের পথ তৈরি করা আপনার জন্য একটি ভালো অপশন।

যোগাযোগের তথ্য

প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে আপনি অ্যাক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন:

ফোন নম্বর: ০১৭১১ ৪৮৮১৪

ওয়েবসাইট: [https://www.accessbangladesh.org

প্রতিবন্ধীদের জন্য কোন কোর্স ভালো?

প্রতিবন্ধীদের জন্য সবচেয়ে ভালো কোর্স নির্বাচন করার সময় তাদের আগ্রহ, সক্ষমতা এবং প্রতিভা অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সাধারণভাবে উপরে উল্লেখ্যিত কোর্স গুলো থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, এবং ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিবন্ধীদের জন্য সবচেয়ে ভালো হতে পারে, কারণ:

#1. গ্রাফিক্স ডিজাইন

কারণ: গ্রাফিক্স ডিজাইন একটি সৃজনশীল কোর্স, যা সাধারণত কম্পিউটার ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে করা হয়, এবং এটি শারীরিক কাজের তুলনায় অনেক কম। যে কেউ কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারে, তারা এই কোর্সে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। ডিজাইন সফটওয়্যার যেমন Photoshop, Illustrator, CorelDRAW শেখার মাধ্যমে তারা ফ্রিল্যান্স কাজ করতে পারবে।

ফায়দা: এটি একটি সৃজনশীল কাজ, যা ঘরে বসে করা যায় এবং একাধিক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ তৈরি করে।

#2. ভিডিও এডিটিং

কারণ: ভিডিও এডিটিং একটি দক্ষতা যা বিশেষ করে অনলাইনে খুবই জনপ্রিয়। এটি টেকনিক্যাল স্কিলসের সাথে সৃজনশীলতার মিশ্রণ। অনেক প্রতিবন্ধী ভিডিও এডিটিং শিখে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন, যেমন ইউটিউব কনটেন্ট তৈরি, অ্যাডভারটাইজিং ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি।

ফায়দা: ভিডিও এডিটিং করার জন্য শক্তিশালী সফটওয়্যার যেমন Adobe Premiere Pro বা Final Cut Pro ব্যবহার করতে হয়, যা শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সহজে আয় করা সম্ভব।

#3. ডিজিটাল মার্কেটিং

কারণ: ডিজিটাল মার্কেটিং একধরনের ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য খুব উপযোগী হতে পারে। এই কোর্সের মধ্যে SEO, PPC (Pay-per-click), Content Marketing, Email Marketing ইত্যাদি রয়েছে। যেহেতু এই কোর্সগুলো অনলাইন, তাই এগুলো যেকোনো অবস্থান থেকে শিখতে এবং কাজ করতে সুবিধাজনক।

ফায়দা: ডিজিটাল মার্কেটিং এখন একটি ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন ক্ষেত্র, এবং বিভিন্ন কোম্পানি বা ফ্রিল্যান্স ক্লায়েন্টদের জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

চুড়ান্ত মন্তব্য 

যদি আপনি প্রতিবন্ধী হয়ে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে চান, তবে এই প্রশিক্ষণটি আপনার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। মনে রাখবেন, নিজের আয়ের পথ তৈরি করুন এবং স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করুন।

আশা করি, এই প্রশিক্ষণ আপনাকে নতুন দিগন্ত দেখাবে। যদি আপনার আরো কিছু প্রশ্ন থাকে, তবে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং নিয়মিত প্রতিবন্ধীবিডি ডট কম-এ ভিজিট করুন।

Visited 36 times, 1 visit(s) today

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *