গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া (২০২৪)

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে থাকে, যার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো গর্ভবতী ভাতা। এই ভাতা তাদের জন্য একটি সহায়ক অর্থনৈতিক সুবিধা যা তাদের গর্ভধারণের সময় বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার খরচ মেটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ২০২৪ সালে গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া সহজ ও সরল করা হয়েছে, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আরও সুবিধাজনক।

গর্ভবতী ভাতা কি? কেন দেয়া হয়?

গর্ভবতী ভাতা হলো একটি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি যা বাংলাদেশের সরকার গর্ভবতী নারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করার জন্য চালু করেছে। এই ভাতা মূলত দরিদ্র ও অসচ্ছল গর্ভবতী নারীদের জন্য, যারা গর্ভাবস্থার সময়ে অর্থনৈতিক চাপে থাকে। গর্ভবতী ভাতা দিয়ে গর্ভবতী নারীরা তাদের স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে সক্ষম হয়। এর ফলে তারা সুস্থভাবে গর্ভধারণ করতে এবং সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারে।

গর্ভবতী ভাতা প্রদান করা হয় মূলত গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য। অনেক পরিবারে গর্ভাবস্থার সময়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে সমস্যা হয়, যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। এই ভাতার মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য হলো গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং গর্ভাবস্থার সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহে সহায়তা করা।

গর্ভবতী ভাতা প্রদান পদ্ধতি, মেয়াদ ও নিয়ম 

২০২৪ সালে গর্ভবতী ভাতার জন্য অনলাইন আবেদন এবং অর্থ বিতরণের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। নির্বাচিত গর্ভবতী মাকে ২ (দুই) বছর ব্যাপী প্রতি মাসে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে ভাতা প্রদান করা হবে। তবে, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাতার পরিমাণ হ্রাস বা বৃদ্ধি হতে পারে। বর্তমানে এ ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ করা হয়েছে।

ভাতার পরিমাণ ও মেয়াদ

গর্ভবতী ভাতার মেয়াদ এবং অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে নিম্নরূপ:

বিষয়বিবরণ
ভাতার মেয়াদ২ বছর
ভাতার পরিমাণ (প্রতি মাসে)সরকার কর্তৃক নির্ধারিত (বর্তমানে ৮০০ টাকা)
বিতরণ পদ্ধতিতফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে

বিতরণ পদ্ধতি

ভাতাভোগীর অর্থ সরাসরি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংক একাউন্ট পরিচালিত হবে। ৬৪টি জেলার সদর উপজেলায় জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রোগ্রাম অফিসার এ দায়িত্ব পালন করবেন।

বিশেষ পরিস্থিতিতে ভাতা প্রদান

১) গর্ভপাত: গর্ভধারণ অবস্থায় গর্ভপাত ঘটলে, গর্ভপাত পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত ভাতা অব্যাহত থাকবে। এরপর নতুন ভাতাভোগী নির্বাচন করা হবে।

২) সন্তান জন্মের পর মৃত্যুবরণ: সন্তান জন্মগ্রহণের পর দুই বছরের মধ্যে মারা গেলে সংশ্লিষ্ট মা অবশিষ্ট সময়ের ভাতা পাবেন।

৩) মায়ের মৃত্যু: নির্বাচিত গর্ভবতী মা দুই বছরের মধ্যে মারা গেলে, তার ভাতা প্রদান বন্ধ হয়ে যাবে। তবে, মায়ের বকেয়া টাকা বৈধ উত্তরাধিকারী (সন্তান) পাবে।

ভাতার সুফল

গর্ভবতী ভাতা কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র মায়েরা শুধু আর্থিক সহায়তাই পান না, তারা মাতৃদুগ্ধ পানের উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় উন্নত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, প্রসব ও প্রসবোত্তর সেবা সম্পর্কে সচেতন হন। এ কর্মসূচি মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার শর্ত ও যোগ্যতা সমূহ 

১) গর্ভবতী মহিলাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

২) গর্ভবতী মহিলার বয়স ২০ বছরের বেশি হতে হবে।

৩) মহিলার পরিবারের মাসিক আয় ১৫০০০ টাকার নিচে হতে হবে

৪) মহিলার অবশ্যই গর্ভবতী হতে হবে এবং এটি তার প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তান হতে হবে। প্রথম সন্তানটির ক্ষেত্রে ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা বেশি থাকে।

৫) গর্ভবতী মহিলাকে তার স্থানীয় ইউনিয়ন বা পৌরসভায় নিবন্ধন করতে হবে, এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা যাচাইকৃত হতে হবে।

৬) গর্ভবতী মহিলাকে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে গর্ভকালীন সেবা গ্রহণ করতে হবে।

৭) নিজের কিংবা পরিবারের কারো কৃষি জমি, মৎস চাষের জন্য কোনো পুকুর নেই এমন মানুষ অগ্রাধিকার পাবে। 

গর্ভবতী ভাতা পেতে কি কি লাগবে?

  • পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি
  • গর্ভবতী সনদপত্র
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
  • ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকত্ব পরিচয় পত্র
  • টিকা গ্রহনের কার্ড 
  • বিকাশ/নগদ/রকেট – নাম্বার 

আবেদনের ক্ষেত্রে যা জানা লাগবে:

  • আবেদনকারীর নাম
  • পিতার নাম
  • মাতার নাম
  • স্বামীর নাম
  • বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা
  • জন্ম তারিখ
  • NID কার্ড নাম্বার
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • রক্তের গ্রুপ
  • গর্ভধারণকাল
  • পেশা
  • মাসিক আয়
  • পরিবারে উপার্জনক্ষম মহিলার সংখ্যা
  • অন্য কোনো ভাতা পাচ্ছে কি-না 

গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম (ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা) 

১ম ধাপ: 

প্রথমেই “এখানে ক্লিক করে” মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চলে যেতে হবে। এবং ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য গুলো হলো: 

  • আবেদনকারীর নাম
  • পিতার নাম
  • মাতার নাম
  • স্বামীর নাম
  • ব্যাচ
  • যে নামে পরিচিত
  • জন্মস্থান
  • ধর্ম 
  • মোবাইল নাম্বার
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • রক্তের রুপ
  • বৈবাহিক তথ্য 

২য় ধাপ:

ব্যক্তিগত তথ্য দেয়া হয়ে গেলে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে। এরপর আর্থ সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। এখানে উল্লেখ্যিত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে। 

৩য় ধাপ: 

এবার পেমেন্টের তথ্য দিতে হবে। অর্থাৎ, যে মাধ্যমে পেমেন্ট নিতে চাচ্ছেন সে বিষয়ক তথ্য দিতে হবে। আপনি চাইলে MFS কিংবা ব্যাংক একাউন্ট বসাতে পারেন। এক্ষেত্রে একাউন্টের ধরণ, প্রতিষ্ঠানের নাম, হিসাবের নাম, হিসাব নং উল্লেখ্য করতে হবে। 

৪র্থ ধাপ:

সবশেষে স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে অনলাইনে ৩০০x৩০০ পিক্সেল সাইজের স্বাক্ষকের ছবি আপলোড করতে হবে। ব্যাস, আপনার কাজ শেষ। 

গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম 

অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের আবেদন পদ্ধতির মাধ্যমে পূরণ হয়ে যায়। তবে অফলাইনে যারা আছে তাদেরকে হাতে লিখে প্রকাশ করতে হবে। নিম্ম হাতে লিখার জন্য যে ফরম সেটার লিংক দিচ্ছি। 

গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম ডাউনলোড

গর্ভবতী ভাতা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর 

গর্ভবতী ভাতা কত টাকা দেয়া হয়?

গর্ভবতী ভাতা কর্মসূচির আওতায় মাসিক ভাতার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৮০০ টাকা। এই টাকা প্রতি ছয় মাস পর পর একবারে প্রদান করা হয়, অর্থাৎ ছয় মাসের জন্য ৪৮০০ টাকা ভাতা পাবেন। 

পুরো দুই বছরে মোট চারবার এই ভাতা প্রদান করা হবে। যাদের দুইটি সন্তান রয়েছে, তাদের জন্য ভাতার মেয়াদ ৩৬ মাস অর্থাৎ তিন বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে তারা তিন বছর ধরে প্রতি ছয় মাস অন্তর ৪৮০০ টাকা করে মোট ছয়বার ভাতা পাবেন।

গর্ভবতী ভাতা কত মাস পর পর পাওয়া যায়?

যদিও ভাতা প্রতি মাসের ভিত্তিতে দেয়া হয় তবে প্রদান করা হয় ৬ মাস পরপর, এক্ষেত্রে ২ বছরে মোট ৪ বার ভাতা পাওয়া যায়।  

গর্ভবতী ভাতা আবেদন কখন করতে হয়?

প্রতি মাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হবে। আর আবেদন সময়কালীন ৪-৬ মাসের গর্ভাবস্থায় থাকতে হবে। 

চুড়ান্ত মন্তব্য 

গর্ভবতী ভাতা অতি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সুরক্ষা যা দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই সহায়ক। এটি তাদের গর্ভধারণের সময় পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করে। ২০২৪ সালে গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হয়েছে, যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটি আশীর্বাদ স্বরূপ। সঠিক তথ্য এবং ডকুমেন্টসের সাহায্যে সহজেই এই ভাতা পাওয়া সম্ভব।

Visited 13,359 times, 160 visit(s) today

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *