মহার্ঘ ভাতার সর্বশেষ আপডেট: স্থাগিত করা হয়েছে মহার্ঘ ভাতা, জানুন কেনো? 

বাংলাদেশের সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বড় এক দুঃসংবাদ এসেছে। আপাতত মহার্ঘ ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মহার্ঘ ভাতা মূলত সরকারি চাকরিজীবীদের অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা, যা মূল বেতনের নির্দিষ্ট শতাংশ হারে প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়েছিলো। এক্ষেত্রে ২০২৫ সালে সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সেটি স্থগিত করা হয়েছে।

মহার্ঘ ভাতার সর্বশেষ আপডেট

বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আপাতত মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছেন না। জানুয়ারি থেকে এই ভাতা কার্যকর করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত থাকলেও, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে বর্তমানে এই ভাতা প্রদান সমীচীন হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভবিষ্যতে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। 

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই মুহূর্তে মহার্ঘ ভাতা প্রদান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং সমাজে বৈষম্য বাড়াতে পারে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পক্ষে অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এমন তো নয় যে সরকারি কর্মচারীরা খুব কম বেতনে চাকরি করছেন।”

সরকারি কর্মচারীদের বেতন ২০১৫ সালের পর থেকে বেসরকারি খাতের তুলনায় ভালো অবস্থায় রয়েছে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিনা সুদে গাড়ির ঋণ এবং গাড়ি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতি মাসে বাড়তি ৫০ হাজার টাকা সহ অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মহার্ঘ ভাতা প্রদান থেকে সরে আসাটাই যৌক্তিক।

কেন স্থাগিত করা হয়েছে মহার্ঘ ভাতা

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি বর্তমানে অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অর্থনীতিকে চাপে রেখেছে।

অর্থবিভাগ জানিয়েছে, মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হলে সরকারের অতিরিক্ত ৫০০০ কোটি টাকা খরচ হতো। ১ম থেকে ১০ম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ১০-১৫ শতাংশ এবং ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে বর্তমান বাজেটে এই অতিরিক্ত ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়।

সরকার কী বলছে?

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, আপাতত মহার্ঘ ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়, তবে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলে এটি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে অর্থবিভাগের খসড়া অনুমোদন না পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

চাকরিজীবীদের প্রতিক্রিয়া

সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে মহার্ঘ ভাতা স্থগিত করায় জীবনযাত্রা আরো কঠিন হবে। অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিই যুক্তিযুক্ত।

ভবিষ্যতে কী হবে?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা হতে পারে। যদি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত হয়, তবে এই ভাতা পুনরায় কার্যকর হতে পারে। তবে এর জন্য সরকারি আয়ের প্রবৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা জরুরি।

চুড়ান্ত মন্তব্য 

সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মহার্ঘ ভাতা প্রদান আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলে নতুন অর্থবছরের বাজেটে বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।

মহার্ঘ ভাতা প্রদান আপাতত স্থগিত থাকলেও, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত হলে এটি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই বিষয়ে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

3 thoughts on “মহার্ঘ ভাতার সর্বশেষ আপডেট: স্থাগিত করা হয়েছে মহার্ঘ ভাতা, জানুন কেনো? ”

  1. এটা দিলে তো সুবিধা হতো সরকারী চাকরিজীবীদের । বাজারের যে দাম তাতে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া উচিত ছিল।

    Reply

Leave a Comment